পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন বিরোধী-শাসিত রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালের সম্মতি না-দেওয়া নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছেই। বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বাঁধার কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এই আবহে সময়সীমার বিষয়টিকে কার্যত সমর্থন করে তাঁর পর্যবেক্ষণের কথা জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল রোহিন্টন ফলি নরিম্যান। জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনইউজেএস) শুক্রবার আয়োজিত সপ্তম এম কে নাম্বিয়ার স্মারক বক্তৃতায় যোগ দিয়ে তাঁর এই অভিমতের কথা তুলে ধরেছেন প্রাক্তন বিচারপতি।
বক্তৃতা-সভার প্রাথমিক সুর বেঁধে দিয়েছিলেন উপাচার্য নির্মলকান্তি চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেছেন ভোপালের ন্যাশনাল ল ইনস্টিটিউট ইউনিভার্সিটির (এনএলআইইউ) প্রাক্তন উপাচার্য ভি বিজয়কুমার। ওই সভাতেই ‘রাজ্যপালের ভূমিকা: কেন্দ্রের প্রহরী না কি রাজ্যের অর্থপূর্ণ প্রধান?’ শীর্ষক বক্তৃতায় সংবিধানের বিভিন্ন ধারা এবং বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা তুলে ধরে প্রাক্তন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “একটা বিষয় পরিষ্কার যে, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কোনও বিলকে শুধুমাত্র অবাঞ্ছিত করার লক্ষ্যে অনির্দিষ্ট কাল আটকে রাখতে পারেন না।” প্রতিটি কাজ যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যেই হওয়া উচিত বলে মনে করেন নরিম্যান। এই সূত্রেই উদাহরণ-সহ নরিম্যানের মত, যদি কোনও বিলকে আটকে রাখা হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পুরো আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকেই ব্যর্থ করে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি, বাংলা-সহ বিরোধী-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যেই শাসক দল অভিযোগ করছে, রাজ্যপাল কেন্দ্রের কথা মতো চলছেন। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নিরিখে রাজ্যপালের অবস্থান নিয়েও তাঁর মতামতের কথা বলেছেন নরিম্যান। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যপাল শুধু কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। তিনি যে শপথ নেন, তা অনুযায়ী রাজ্যপালকে শুধুমাত্র সংবিধান ও রাজ্যের জনতার দিকে তাকাতে হবে। তবে ৩৫৬ ধারার মতো কিছু ক্ষেত্রে কখনও কখনও তাঁকে কেন্দ্রকে জানাতে হবে যে, রাজ্যে এমন কিছু চলছে, যা উচিত নয় ও অসাংবিধানিক।” রাজ্যপালের কাজ যে শেষ পর্যন্ত ‘কেন্দ্র-রাজ্যের সেতুবন্ধন’ করা, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি।
বক্তৃতা শেষে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর-পর্বেও যোগ দিয়েছিলেন নরিম্যান।