• নীতি বদলেও সুরাহা হল কই, উৎসবের বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং নিয়ে প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্সে থাকতে হবে পুজো কমিটির নাম। নিয়ম বলছে, এই নাম থাকলে তবেই মিলবে পুরসভার বিজ্ঞাপনীকরে ছাড়! মহালয়া থেকে দশমীর সাত দিন পরেও সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভাকে দিতে হবে না করের টাকা। অন্যথায় বর্গফুট-পিছু ৪০ টাকা বিজ্ঞাপনী খরচ গুনতে হবে প্রতি মাসে। কিন্তু পুজোর এই সময়ে এই নিয়ম মানছেন ক’জন? উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনেই পুজো কমিটির নাম নেই। এমন নিয়ম যে রয়েছে, সে ব্যাপারে সচেতনতাও নেই পুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকের। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এ বারও কি নিয়ম রয়ে যাবে সেই খাতায়-কলমেই?

    এমনিতেই বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং বাবদ পুরসভার আয় ধাক্কা খায় প্রতিবছর। কোভিডের সময়ে এই আয় বছরে সাত থেকে আট কোটি টাকায় নেমে গিয়েছিল। কিন্তু পরের কয়েক বছরে ধীরে ধীরে বাড়লেও ২০ কোটি টাকার উপরে সেই আয়পৌঁছেছে বলে মনে করতে পারছেন না পুরসভার কর্মীরাও। যদিও তাঁদের দাবি, কড়া নজরদারি চালালে এই আয় বছরে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্তও হওয়া সম্ভব! কিন্তু নজরদারি চালাবেনই বা কে? পুরসভার এক কর্মীই বললেন, ‘‘প্রায়ইপুরসভার লোকজন শহরের বেআইনি বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং, ফ্লেক্স দেখতে বেরোন। তাঁরা পদক্ষেপও করেন। কিন্তু অফিসার পদমর্যাদার কর্মী রয়েছেন সাত জন। এ ছাড়া আছেন আরও তিন জন। এই নিয়ে কলকাতা পুরসভার মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডের বেআইনি হোর্ডিং দেখা সম্ভব?’’ এতেই আয়ের টাকা আর পুরসভার কোষাগারে পৌঁছয় না বলেঅভিযোগ। পুজোর সময়ে সরকার থেকে পুজো কমিটিগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়। ফলে, দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতো কোনও উৎসবেই বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং বাবদ আয় হয় না পুরসভার।

    কিন্তু এই ছাড়ের মধ্যেই যেমন খুশি হোর্ডিং লাগানোর অভিযোগ ওঠে প্রতি বছর। হোর্ডিংয়ের দাপটে শহর জুড়েই কার্যত হাঁসফাঁসঅবস্থা হয়। এ বারও দেখা যাচ্ছে, কোথাও বাড়ির গা বেয়ে উঠে গিয়েছে বাঁশের গায়ে লাগানো সার সার হোর্ডিং। কোথাও ফুটপাতের মুখ এমন ভাবে হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে যে, সেখানে দাঁড়িয়ে বোঝাই যায় না, রাস্তায় কোন বাস আসছে। উত্তর থেকেদক্ষিণ কলকাতা ঘুরে আবার দেখা গেল, বেশির ভাগ সেতুর গায়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাঁশের কাঠামো লাগানো। দিনকয়েকের মধ্যেইতাতে বিশাল হোর্ডিং উঠবে। কাঠামোগুলি কি আদৌ নিরাপদ? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর নেই পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে।

    এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্যই চলতি বছরে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং লাগানোর নয়া নীতি পাশ করেছে পুরসভা। পুর বিজ্ঞাপন নীতি অনুযায়ী, শহরের কোনও রাস্তাতেই পথচারীদের দৃষ্টি আটকে হোর্ডিং লাগানো যাবে না। কারও বাড়ির জানলা বা বারান্দা ঢেকেও হোর্ডিং লাগানো নিষিদ্ধ। পুরসভার কিছু ‘নো অ্যাড জ়োন’ রয়েছে।সেখানেও হোর্ডিং নয়। বড় মোড়ের কাছে হোর্ডিং লাগালে রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব ছেড়ে রাখতে হবে। এ ছাড়াও হোর্ডিং লাগানোর আগে পুরসভা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। হোর্ডিংটি ধরে রাখার জন্য যে কাঠামো বানানো হয়েছে, তার ধারণক্ষমতা পরীক্ষা করে তবেই পুরসভা অনুমতি দেবে। স্থায়ী হোর্ডিং লাগাতে হবে মাটি থেকে ন্যূনতম সাড়ে আট ফুট উচ্চতায়। এর সঙ্গেই এ বার পুজো কমিটির নাম থাকা হোর্ডিং বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত ক্ষেত্রে অর্থ ধার্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    কিন্তু এই সব নিয়ম মানা হচ্ছে কই? পুরসভার মেয়র পারিষদ (বিজ্ঞাপন) দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘নিয়ম মানতে হবে সকলকেই। সরকার পুজো কমিটিগুলিকে সুরাহা দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু তাই বলে যে যেমন খুশি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং লাগাবেন, সেটা হবে না। পুরসভার তরফে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)