আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্তে ভয়াবহ গাফিলতি ও প্রমাণ জাল করার প্রবণতা আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, মোট ৯৭টি খালাসের রায়ের মধ্যে ৯৩টি আদেশ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়— অন্তত ১৭টি মামলায় বিচারকরা স্পষ্টভাবে পুলিশের “সাজানো প্রমাণ” ও “জাল সাক্ষ্য” তুলে ধরেছেন।
আদালত লক্ষ করেছে, অন্তত ১২টি মামলায় পুলিশ এমন সাক্ষী হাজির করেছে যাদের বয়ান “কৃত্রিম” ও সন্দেহজনক। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করলেও যে তারা অভিযুক্তদের চেনেন, আদালতে মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। বহু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সনাক্তকরণের জন্য অপরিহার্য টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড (TIP)-ও করা হয়নি।
দুটি ঘটনায় সাক্ষীরা আদালতে শপথ নিয়ে জানান যে তাদের বিবৃতি আসলে তাদের নিজেদের নয়, বরং পুলিশ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লিখিত বা যোগ করা হয়েছিল। আরও কয়েকটি মামলায় আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে, তদন্ত সঠিকভাবে করার বদলে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির তাড়নায় পুলিশ অভিযোগপত্র সাজিয়েছে। এক ঘটনায় বিচারক নথি ‘ম্যানিপুলেশন’-এর বিষয়টিও সরাসরি উল্লেখ করেছেন।
এমন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্ট কঠোর UAPA আইনের অধীনে গ্রেপ্তার হওয়া নয়জন সামাজিক কর্মী ও ছাত্রনেতার জামিন আবেদন খারিজ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন— উমর খালিদ, শরজিল ইমাম, খালিদ সাইফি, আতহার খান, মহম্মদ সেলিম খান, শিফাউর রহমান, মীরান হায়দার, গুলফিশা ফাতিমা এবং শাদাব আহমেদ। তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাবন্দি।
বিচারকরা একাধিক রায়ে উল্লেখ করেছেন— পুলিশের তৈরি সাক্ষ্য “সাজানো”, অনেক অভিযোগ “কল্পিত” এবং নির্দোষ মানুষদের উপর জোর করে চাপানো হয়েছে। অভিযোগপত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ‘padding of evidence’ বা প্রমাণ জাল করার প্রবণতা ধরা পড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কনস্টেবলরা মিথ্যা দাবি করেছেন যে তারা অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে দেখেছেন। অতিরিক্ত সেশনস জজ পরবীন সিং এক আদেশে তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “এ ধরনের সাজানো প্রমাণ অভিযুক্তের অধিকার লঙ্ঘন করে এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে।”
এই পর্যবেক্ষণগুলি নতুন করে পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার প্রশ্ন তুলেছে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যতদিন না পুলিশকে মিথ্যা মামলা সাজানো, ভুয়ো সাক্ষী হাজির করা ও নথি বিকৃত করার জন্য দায়ী করা হবে, ততদিন জনসাধারণের আস্থা নষ্ট হতে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাক্ষীকে “তৈরি” করে হাজির করার এই ধারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলে আসছে, আর আজও তার অবসান হয়নি। ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গায় অন্তত ৫৩ জন নিহত ও ৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিলেন। সিএএ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুরু হওয়া এই হিংসা আজও বিচারব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলছে— ন্যায়বিচার হবে, নাকি সাজানো মামলার আড়ালে প্রকৃত দোষীরা আড়ালেই থেকে যাবে?