নামেই পড়ুয়া, আদতে আইএসআইএস-এর হয়ে বোমা বানাতেন, নিশানা ছিল বিজেপি নেতারা! রাঁচির হোটেল থেকে গ্রেপ্তার এক...
আজকাল | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাঁচির ইসলামনগর এলাকার এক অচেনা ও নির্জন কোণে রয়েছে তবরক লজ। বাইরে থেকে এটি 'হোটেল'-এর মতো দেখালেও ভেতর থেকে এটি একটি জরাজীর্ণ, অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে ভবন, যেখানে ছোট ছোট ঘর ভাড়া দেওয়া হত। আর সেখানেই আইএসআইএস-এর জন্য তৈরি করা হচ্ছিল বোমা। বড় চক্রের পর্দা ফাঁস করল দিল্লি পুলিশ এবং ঝাড়খণ্ডের সন্ত্রাস দমন শাখা।
জানা গিয়েছেছে, হোটেল-এর ১৫ নম্বর ঘরে থাকতেন আজহার দানিশ, যিনি সরকারি চাকরির জন্য এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি আইএসআইএস জঙ্গিগোষ্ঠীকে মদত করতে বোমা তৈরি করছিলেন।
গত সপ্তাহে দিল্লি পুলিশ আরেক জঙ্গি আফতাব কুরেশিকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁকে জেরা করেই তবরক লজের ১৫ নম্বর ঘরের গোপন রহস্য ফাঁস হয়। আফতাবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ এবং ঝাড়খণ্ডের সন্ত্রাস দমন শাখা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আজহার দানিশ ও আরও ১২ জনকে গ্রেফতার করে।
সূত্রের খবর, এর ফলে একটি জঙ্গি চক্রকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে, যারা শুধু বোমা তৈরি করছিল না, বরং নতুন লোকজনকে জঙ্গি সংগঠনে ঢোকাচ্ছিল এবং বিজেপির শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করার পরিকল্পনা করছিল।
সূত্র আরও জানিয়েছে, আজহারের ঘর থেকে গান পাউডার, বোমা, প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং দেশি তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখানেই বোমা তৈরি হত এবং পরে সেগুলি সুবর্ণ৫৪৩রেখা নদীতে পরীক্ষা করে দেখা হত। পটাশিয়াম নাইট্রেট বা সল্টপিটার হল এক ধরনের রাসায়নিক, যা সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং গান পাউডারের অন্যতম উপাদান। সাদা স্ফটিকের মতো দেখতে এই পদার্থ শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গেলে ক্ষতিকর পরিণাম হতে পারে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, আজহার গত বছর থেকেই এখানে থাকতে শুরু করেছিলেন। পরে পাকিস্তানি একজন সোশাল মিডিয়ায় তাঁকে ভুল পথে নিয়ে যায়। তারপর আজহারও অন্যদের একইভাবে দলে টানতে শুরু করেন।
এই নিয়োগ এবং প্ররোচনার বেশিরভাগই করা হত 'সিগন্যাল' মেসেজিং অ্যাপে, যেটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন দেয়। সন্দেহ দবর করতে সেখানে সাধারণ নামের গ্রুপ বানানো হত, যেমন ‘ইন্টার্ন ইন্টারভিউ’ বা ‘বিজনেস আইডিয়া’।
এই গ্রুপগুলো ব্যবহার করা হত তহবিল জোগাড় করার জন্যও। সেই টাকায় বোমা বানানোর সামগ্রী কেনা হত। ছুরি আর রাসায়নিক পদার্থ অনলাইন থেকে অর্ডার করা হত এবং আজহারের পাকিস্তানি হ্যান্ডলার তাঁকে 'পিইটিএন' (পেন্টাএরিথ্রিটল টেট্রানাইট্রেট) বোমা তৈরি শেখাত।এছাড়াও অ্যাসিটোন পারঅক্সাইড দিয়ে তৈরি আরও এক ধরনের বোমা বানানো হত, যাকে বলা হয় ‘মাদার অফ সাটান’। এই ঘরে সেই সব বোমা বানানো, পরীক্ষা এবং মজুত করা হত। তদন্তকারীরা বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করেছে।
গ্রেফতার হওয়া এই জঙ্গি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের পরিচয়ও মিলেছে। তারা হল- সুফিয়ান খান, মোহাম্মদ হুজাইফ ইয়ামান এবং কামরান কামরান কুরেশি। সূত্র জানিয়েছে, তারা ধর্মীয় স্থানে হামলার পরিকল্পনাও করেছিল।