আফ্রিকায় প্রথম অস্ত্র কারখানা ভারতের, বদলে যাওয়া বিশ্বে কেন গুরুত্বপূর্ণ রাজনাথের মরক্কো সফর?
প্রতিদিন | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বহু যুদ্ধে দীর্ণ আফ্রিকা। বিভিন্ন যায়গায় আজও জ্বলছে সংঘাতের আগুন। মহাদেশটিতে গৃহযুদ্ধের উত্তাপে ফায়দা লুটছে বিদেশি শক্তি। অস্ত্র থেকে শুরু করে ‘পুতুল সরকার’, আফ্রিকার তথাকথিতভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি সেখান থেকে মুনাফা খোঁজার চেষ্টা করেছে পশ্চিমের দেশগুলি। উত্তরোত্তর শক্তি বাড়াচ্ছে চিন। এই প্রেক্ষাপটে মরোক্কো যাচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে টাটাদের তৈরি অস্ত্র কারখানার উদ্বোধন করবেন তিনি।
২০১৫ সালে মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মহম্মদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত হয়। এবার দু’দিনের সফরে ২২ তারিখ মরক্কো যাচ্ছেন রাজনাথ সিং। এই প্রথমবার কোনও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী সরকারি সফর করছেন উত্তর আফ্রিকার এই দেশে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারতের নতুন দিশা দেখাবে তাঁর এই সফর। দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দিক থেকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক একটি মউ সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে যৌথ উদ্যোগের পথ আরও মসৃণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান শক্ত করার জন্য যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে বিমানবাহী রণতরী, মিসাইল থেকে শুরু করে অন্যান্য অস্ত্র, সব ক্ষেত্রেই আত্মনির্ভর হওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে ভারত। বিদেশি অস্ত্রের উপর নির্ভরতা অতীতে চাপে ফেলেছে ভারতকে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে ভারত দেশে তৈরি তেজস, ব্রহ্মস-সহ অন্যান্য অস্ত্র তৈরির উপর জোর দেওয়া শুরু করেছে। এবার সেই উৎপাদনের ডালি নিয়ে বিশ্ববাজারে হাজির রাজনাথ। এই সফরে, মরক্কোর বেরশিদে টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেম ম্যারোক-এর নতুন কারখানা উদ্বোধন হবে। এই কারখানায় হুইলড আর্মার্ড প্ল্যাটফর্ম বা সাঁজোয়া গাড়ি উৎপাদন করা হবে। এটাই আফ্রিকার মাটিতে ভারতের প্রথম হাতিয়ার কারখানা। প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভর হওয়া তথা বিশ্ব বাজারে নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই সফর চলাকালীন, মরক্কোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদেলতিফ লৌদিয়ির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন রাজনাথ। সেখানে প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা এবং দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। গত জুলাই মাসে পাঁচ দেশে সফর করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেই সফরে আফ্রিকার ঘানা এবং নামিবিয়ায় যান তিনি। এই সফরে প্রতিরক্ষা, বিরল খনিজ, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। মোদির এই সফর বুঝিয়ে দেয় জোট নিরপেক্ষতা এবং অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির পাশাপাশি ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ আফ্রিকা সংক্রান্ত নীতির দিকেও নজর দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে যে ভারত কাজ করছে তার প্রমাণ রাজনাথের মরোক্কো সফর।
বলে রাখা ভালো, শুল্কযুদ্ধের প্রভাবে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সেই সময়েই চিনের সঙ্গে বেড়েছে বন্ধুত্ব। তিয়ানজিনে ভারত-রাশিয়া-চিনের একমঞ্চে ছবি চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কিন্তু এরপরেও বাণিজ্য প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নে কোনও ‘বন্ধু’কেই ভারত জায়গা ছেড়ে দেবে না তার প্রমাণ রোজ দিচ্ছে মোদি