শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও গাছের পাতার রংবদল বেলজিয়ামের বাঙালিদের কাছে শারদোৎসবের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে আসে।
বেলজিয়ামে মোট ৬-৭ টি দুর্গাপুজো হয়, তার মধ্যে রাজধানী ব্রাসেলসে মূলত ৩টি দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তা ছাড়া পার্শ্ববর্তী শহর আন্তয়ের্পও হচ্ছে কয়েকটি পুজো। ব্রাসেলসের সার্বজনীন পুজো সমিতি, সম্মেলনী এবং তেরো পার্বণ সব থেকে পুরোনো কয়েকটি পুজো, এগুলির মধ্যে ‘তেরো পার্বণ’-এর এ বার পঞ্চম বর্ষের পুজো। সমমনস্ক কিছু বাঙালি পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের নামের সাথে সাদৃশ্য রেখে দুর্গাপুজো ছাড়াও সারা বছর ধরে নববর্ষ, দোল উৎসব, সরস্বতী পুজো-সহ আরও নানা অনুষ্ঠান পালন করে।
এই পুজোয় কুমোরটুলির প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী সনাতন পালের তৈরি দুর্গাপ্রতিমাটি ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ এবং এখানকার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। আর প্রবাসের পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলার শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করানোর প্রচেষ্টা প্রতিবছর মণ্ডপ সজ্জায়। এই বছরের মণ্ডপ সজ্জা মূলত বাঙলা ব্যান্ড সঙ্গীত এর কয়েকটি ধারাকে প্রবাসের পরবর্তী প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে পরিচিতি করানোর প্রচেষ্টা। তেরো পার্বণ পরিবারের মহিলাদের তত্ত্বাবধানে সেজে উঠছে মণ্ডপ।
লিঙ্গ-বর্ণ নির্বিশেষে পুরুষ এবং মহিলা উভয় পুরোহিতের পৌরোহিত্যে বিধি মেনে দেবী বন্দনা, চণ্ডীপাঠ, ভোগ প্রসাদ বিতরণ, কুমারী পুজো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সিঁদুর খেলা আরও নানা হইহুল্লোড় শুধু নয়, সাথে থাকছে বাঙালির ভূরিভোজ; যেখানে লুচি-ছোলার ডাল, কড়াইশুটির কচুরি, মাটন কষা-বাসন্তী পোলাও, ঠাকুরবাড়ির খিচুড়ি, ধোঁকার ডালনা ছাড়াও থাকছে কলকাতার মাটন বিরিয়ানি। এ ছাড়াও থাকছে রকমারি বাঙালি মিষ্টি এবং ফুচকা ও মোমো সহ নানা মুখরোচক জলখাবারের আয়োজন।
২৮শে সেপ্টেম্বর স্থানীয় প্রবাসী বাঙালি ছোট-বড়রা মিলে বেদপাঠের মাধ্যমে সূচনা করবে পুজো, চলবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত। আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে তাই উৎসাহে মেতে রয়েছেন শহরের লোকজন, তাতে বাঙালিদের পাশাপাশি সমান উৎসাহ নিয়ে অংশগ্রহণ করছে অনেক অবাঙালি তথা ইউরোপীয় মানুষজন। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।