ভরণপোষণের সামর্থ্য না থাকলে মুসলিম পুরুষও একধিক বিয়ে করতে পারেন না, পর্যবেক্ষণ কেরল হাইকোর্টের
আজকাল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোরান মুসলিমদের একের বেশি বিয়ের অনুমতি দিলেও আদালতে সেটা সবসময় গ্রহণযোগ্য নয়। একাধিক স্ত্রীর ভরণপোষণের সামর্থ্য না থাকলে মুসলিম পুরুষও একধিক বিয়ে করতে পারেন না। একটি মামলার শুনানি চলাকালীন এমনই পর্যবেক্ষণ কেরল হাইকোর্টের।
মূল মামলাটি এক মহিলার দায়ের করা। কেরলের ৩৯ বছর বয়সী পেরিনথালমান্নার বাসিন্দা এক মহিলা মামলাটি করেছিলেন তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। ওই মহিলা ছিলেন স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। মহিলার দাবি ছিল, স্বামী তাঁকে কোনওরকম ভরণপোষণ দেন না। মাসে তাঁকে অন্তত ১০ হাজার টাকা ভরণপোষণ দিতে হবে স্বামীকে।
ঘটনাচক্রে ওই মহিলার স্বামী আবার ভিক্ষুক। তাঁর নিজেরই দিন গুজরান হয় ভিক্ষাবৃত্তি করে। আদালত ওই ভরণপোষণের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি পি ভি কুন্নিকৃষ্ণণ বলেছেন, "ভিক্ষুকের বাটিতে আর কী হাত দেবেন।"
এর আগে, আবেদনকারী ওই মহিলা একটি পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেখানে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয় যে, পালাক্কাদের কুম্বাডির বাসিন্দা আবেদনকারী মহিলার ৪৬ বছর বয়সী স্বামী ভিক্ষা করে বেঁচে রয়েছে, ফলে তাঁকে ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া যাবে না।
এরপর কেরল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মহিলা। কিন্তু রায়ে তেমন কোনও পার্থক্য হল না। তবে ভরণপোষণের আর্জি খারিজ করে দিলেও কেরল হাইকোর্ট ওই মুসলিম ভিখারিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। বিচারপতি পি ভি কুন্নিকৃষ্ণণ বলছেন, "উনিও ধোঁয়া তুলসীপাতা নন। উনি দ্বিতীয় স্ত্রীকে হুমকি দিচ্ছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তৃতীয়বার বিয়ে করে নেবেন।" বিচারপতির কথায়, "আইন এই ধরনের বিয়ে মেনে নিতে পারে না। এক্ষেত্রে শরিয়া আইনের আড়ালে অন্যায় করছেন ওই ভিক্ষুক। কারণ কোরানেও বলা আছে, মুসলিম পুরুষের সামর্থ্য থাকলে তবেই তিনি একাধিক বিয়ে করতে পারেন। সামর্থ্য না থাকলে একধিক বিয়ে গ্রহণযোগ্য নয়।"
কেরল হাই কোর্ট বলছে, কোরানও বহুগামিতা সমর্থন করে না। কোরানে বলা আছে, একজন মুসলিম তখনই একাধিক বিয়ে করবেন যখন তিনি প্রথম স্ত্রী, দ্বিতীয় স্ত্রী, তৃতীয় স্ত্রী এবং চতুর্থ স্ত্রী, সবাইকে সমানভাবে সুবিচার দিতে পারবেন। তাছাড়া মুসলিম সমাজের বেশিরভাগ মানুষই একটা মাত্র বিয়ে করেন। তাই সামর্থ্য না থাকলে মুসলিমরাও একাধিক বিয়ে করতে পারেন না।
কেরল হাইকোর্টে জানিয়েছে যে, আবেদনকারী মহিলার আবেদনটি পর্যালোচনা দেখা হয়েছে। সেখানে দেকা যাচ্ছে যে, বিবাদী ভিক্ষা-সহ বিভিন্ন উৎস থেকে মাসে ২৫,০০০ টাকা আয় করছেন এবং আবেদনকারী প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা ভরণপোষণ চেয়েছিলেন। বিবাদী বর্তমানে তাঁর প্রথম স্ত্রীর সাথে থাকে।
অন্ধ ভিক্ষুক স্বামী তাঁকে নিয়মিতভাবে নির্যাতন করে বলে আবেদনে জানিয়েছিলেন আবেদনকারী মহিলা। তবে সেই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে উচ্চ-আদালত।
বিবাদীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত বলেছে যে ভিক্ষাবৃত্তিকে জীবিকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না এবং রাষ্ট্র, সমাজ এবং বিচার বিভাগের কর্তব্য হলো কেউ যাতে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় না নেয় তা নিশ্চিত করা। আদালত জোর দিয়ে বলেছে যে রাষ্ট্রকে এই ধরণের ব্যক্তিদের খাদ্য ও পোশাক সরবরাহ করতে হবে।
বিচারপতি পি ভি কুন্নিকৃষ্ণণ বলেছেন, "যদি কোনও অন্ধ ব্যক্তি মসজিদের সামনে ভিক্ষা করে এবং মুসলিম প্রথাগত আইনের মৌলিক নীতিগুলি সম্পর্কে জ্ঞান না রেখে একের পর এক বিবাহ করে, তাহলে তাঁকে যথাযথভাবে কাউন্সেলিং করা উচিত। মুসলিম সম্প্রদায়ের বহুবিবাহের শিকার নিঃস্ব স্ত্রীদের সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য।"
উচ্চ-আদালত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের একটি অনুলিপি সমাজকল্যাণ বিভাগের সচিবকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতির আদেশ, "বিভাগকে ধর্মীয় নেতা-সহ উপযুক্ত কাউন্সেলরদের সহায়তায় বিবাদীকে কাউন্সেলিং প্রদান করতে হবে।"