১০০ মিটারের মধ্যে যেন দেখা না যায়, তাহলেই কিন্তু পদক্ষেপ, কড়া হুঁশিয়ারি প্রশাসনের...
আজকাল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধূমপান করলে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে একটা বিশেষ 'ইমেজ' তৈরি করা যায়। তার পাশাপাশি 'স্ট্রেস' কমে এবং পড়াশোনায় মনোসংযোগ করতে সুবিধা হয়। এমনই কিছু ভুল ধারণা থেকে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অল্প বয়সে ধূমপান করার প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে উঠছে। আর শুধু কম বয়সী ছাত্রছাত্রী নয় বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বেই এখন নারী এবং পুরুষ প্রায় সমানভাবেই ধূমপান করে থাকেন। তবে উদ্বেগজনক তথ্য হলো ভারতবর্ষের মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে।
আর এই সমস্ত দিকগুলো নজরে আসার পর এবার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য যেমন বিড়ি, সিগারেট, গুটকা, খৈনি -সহ বিভিন্ন ধরনের জর্দা, পানমশলা প্রভৃতি জিনিসের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার সমস্ত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে এই সমস্ত তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধের জন্য সমস্ত বিদ্যালয়কে কড়া নির্দেশিকা পাঠানো হল জেলা প্রশাসনের তরফে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ জেলায় ন'শোর বেশি সরকারি হাই স্কুল এবং মাদ্রাসা-সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সমস্ত সরকারি বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক জাতীয় দ্রব্য বিক্রি কঠোর হাতে বন্ধ করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। এর জন্য বিশেষ নেশা মুক্তি অভিযানও শুরু হতে চলেছে প্রশাসনের তরফ থেকে।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক জানিয়েছেন,'বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও ধরনের সিগারেট বা নেশা জাতীয় জিনিস বিক্রি করা যাবে না। এরকম কোনও ঘটনা ঘটলে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পুলিশকে অভিযোগ জানাতে হবে এবং পুলিশ-প্রশাসনের তরফ থেকে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন,' ভারতবর্ষে ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছোটবেলা থেকেই অনেকে ধূমপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। নিয়মিত ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, বন্ধ্যাত্বের মত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নিয়মিত ধূমপান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে শুরু করে।'
বিভিন্ন সংস্থার চালানো তথ্য অনুযায়ী অনেকেই ভুল ধারণা থেকে ধূমপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, কিছু ছাত্রছাত্রী মনে করেন নিয়মিত ধূমপান করলে ওজন কমে। তাই স্থুলকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী ধূমপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। মুর্শিদাবাদের নিউ ফরাক্কা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন,' সরকারি নির্দেশে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের কু-প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য ইতিমধ্যেই আমার স্কুলে বিভিন্ন রকমের দেওয়াল লিখন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এলাকার সমস্ত দোকানদারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও তামাক জাতীয় বা নেশার জিনিস বিক্রি করা যাবে না।'
প্রশাসন সূত্রের খবর, সমস্ত স্কুলকে নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত এলাকা হলুদ রং দিয়ে চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সমস্ত স্কুলগুলোতে তামাকের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য একজন শিক্ষককে 'নোডাল অফিসার' হিসেবে নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা মেনে জেলার প্রায় সমস্ত স্কুল এই 'নোডাল অফিসার' নিয়োগের কাজ শেষ হয়েছে। নোডাল অফিসারের অধীনে একটি স্কোয়াড থাকছে। তারা স্কুলের মধ্যে কোনও শিক্ষক বা কোনও ছাত্রছাত্রীকে তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন বা ধূমপান করতে দেখলে সেই বিষয়ে সতর্ক করবে এবং তামাক ব্যবহারের কু-প্রভাব সম্পর্কে বোঝাবে। তাতেও কাজ না হলে ওই টিমকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দু'শো টাকা ফাইন করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। মহম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন,' আমার স্কুলের খুব কাছেই ফরাক্কা বিডিও অফিস এবং আমার স্কুলের আশেপাশে কোনও দোকানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে না।'
তবে জেলার স্কুলগুলোতে নিচু শ্রেণি থেকেই ছাত্রদের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার এবং ধূমপান করার প্রবণতা যে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে তা মেনে নিয়েছেন একাধিক স্কুলের শিক্ষকরা। নাম না প্রকাশের শর্তে বহরমপুর মহকুমার অন্তর্গত একটি স্কুলের এক শিক্ষক জানান,'বর্তমান স্কুলে বদলি হয়ে আসার আগে আমি ডোমকল মহকুমার একটি স্কুলে চাকরি করতাম। সেখানে আমার স্কুলের আশেপাশে প্রচুর দোকানে তামার জাতীয় দ্রব্য, বিডি, সিগারেট এমনকি মদও পাওয়া যেত।' অন্য এক শিক্ষক বলেন,'গ্রামে মেয়েদের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা না থাকলেও সপ্তম-অষ্টম শ্রেণী থেকেই ছাত্রদের মধ্যেই ধূমপান করার শুরু প্রবণতা শুরু হচ্ছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ছাত্ররা পৌঁছালে তাদের কাছে ধূমপান একটি স্বাভাবিক ঘটনা মনে হচ্ছে।' একাধিক শিক্ষক নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে জানিয়েছেন, একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্ররা ধূমপান করার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে দেশলাই বা লাইটার চেয়েছেন এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমাদের মতো বেশ কয়েকজন শিক্ষক হয়েছেন।
এক শিক্ষক বলেন, গ্রামাঞ্চলে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী পরিবারের মধ্যে প্রথম স্কুলে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের লোকেদের কাছে ছেলে মেয়েদের মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তোলার প্রবণতা এখনও গড়ে ওঠেনি। এর পাশাপাশিও জীবনে 'ভালো কিছু' না পেয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী হতাশা থেকে ধূমপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। তবে ছাত্র ছাত্রীরা যেমন একদিকে ধূমপান এবং তামাক জাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নিয়ম ভেঙে স্কুল চত্বরের মধ্যেই ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন করার অভিযোগ উঠেছে বহু স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। স্কুলের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য সেবন বা গুটকা-পান মশলা খাওয়া বা ধুমপান করা নিষিদ্ধ হলেও বহু স্কুলে শিক্ষকরা 'টিচার্স রুম' বা শৌচাগারে ঢুকে নিয়মিত এই সমস্ত দ্রব্য সেবন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।