• পুজোর আগে বড় সুখবর অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য,অবশেষে পেতে চলেছেন বকেয়া টাকা ...
    আজকাল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আসন্ন শারদ উৎসবের আগে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে দীর্ঘদিন বকেয়া থাকার পর  নিজেদের প্রাপ্য গ্র্যাচুয়িটির টাকা অবশেষে পেতে চলেছেন বহরমপুর পুরসভার শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ এক আদেশনামায় জানিয়েছে, আগামী ১০ মাসের মধ্যে বহরমপুর পুরসভাকে মামলাকারীদের বকেয়া টাকা মেটাতে হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে পুরসভা গ্র্যাচুয়িটির  টাকা মেটাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজ্য সরকারকে পুরসভাকে আর্থিক দায়ভার মেটানোর জন্য সাহায্য করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ইতিমধ্যে নিজেদের রায়ের নির্দেশিকা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে রাজ্যের অর্থসচিবকে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে পুরসভা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই  সুদ-সহ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের গ্র্যাচুয়িটির টাকা মিটিয়ে দিতে পারে। 

    কলকাতা হাইকোর্টের এই যুগান্তকারী নির্দেশিকার পর  রাজ্যের সাতটি পুরনিগম এবং ১২১টি পুরসভায় অবসরপ্রাপ্ত কয়েক হাজার কর্মচারী আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। রাজ্যের আইনজীবীদের একটি বড় অংশ মনে করছেন কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় উল্লেখ করে আগামী দিন  বিভিন্ন পুরসভা এবং পুরনিগম থেকে অবসরপ্রাপ্ত কয়েক হাজার কর্মচারী এবার  নিজেদের প্রাপ্য গ্র্যাচুয়িটির টাকা পেতে পারেন।  

    প্রসঙ্গত, রাজ্যের একাধিক পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত প্রচুর কর্মচারী বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন অবসর নেওয়ার পর দীর্ঘদিন কেটে গেলেও নিজেদের প্রাপ্য গ্র্যাচুয়িটির  টাকা তাঁরা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে পুরসভা এবং পুরনিগমগুলির তরফ থেকে তাদের বেহাল আর্থিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে  অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের গ্র্যাচুয়িটির টাকা সময়মতো মেটানোর ক্ষেত্রে তাদের অপারগতার কথা বলা হয়েছে। 

    রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এবং সরকার পোষিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা অবসরের পর একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা গ্র্যাচুয়িটি হিসেবে পেয়ে থাকেন। রাজ্য সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মীরা এই টাকা সরাসরি সরকারের কোষাগার থেকে পেলেও সরকার পোষিত বিভিন্ন দপ্তরের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার জন্য একাধিক পুরসভা এবং পুরনিগমের কর্মচারীরা অবসর নেওয়ার পরও নিজেদের প্রাপ্য গ্র্যাচুয়িটির টাকা দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

    অন্যদিকে পুরসভাগুলিতে কর্মরত কর্মীদের  অবসরকালীন আর্থিক বকেয়া মেটানোর দায়ভার নিতেও রাজ্য সরকার 'অনিহা' প্রকাশ করেছে। সরকারের তরফ থেকে পুরসভাগুলির নিজস্ব আয় থেকেই এই বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার কথা বারবার বলা হয়েছে। যদিও রাজ্যের একাধিক পুরসভা উন্নয়নমূলক কাজ  এবং অস্থায়ী কর্মীদের বেতনের টাকা যোগাতে গিয়ে তাদের নিজস্ব আয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের বকেয়া মেটাতে পারছে না বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, বহরমপুর পুরসভার প্রায় ১২৭ জন কর্মচারী অবসর নেওয়ার দীর্ঘদিন পরও  প্রাপ্য গ্র্যাচুয়িটির  টাকা না পেয়ে কলকাতা  হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। পুরসভার সূত্রের খবর, তাঁদের প্রত্যেকের প্রাপ্য প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। কংগ্রেস এবং বাম আমলে পুরসভায় নিযুক্ত হওয়া এই সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা বেশিরভাগই  ২০১১-১২ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। 

    বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখার্জি বলেন,' কলকাতা হাইকোর্টে ১২৭ জন মামলা করলেও প্রায় সাড়ে চার'শ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর টাকা বাকি রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ আমরা দেখেছি। রাজ্য সরকার যেমন নির্দেশ দেবে তেমনি পদক্ষেপ করা হবে।' তবে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন,' বহরমপুর পুরসভার অধীনে থাকা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রায় ১০ কোটি টাকা পুর কর বাকি রয়েছে। এই টাকা সরকারি দপ্তরগুলি মিটিয়ে দিলে পুরসভা নিজেরাই গ্র্যাচুয়িটির একটি বড় অংশের টাকা মিটিয়ে দিতে পারবে।' অন্যদিকে এই মামলায় বহরমপুর পুরসভার আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন,' এর আগেও এই ইস্যুতে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় আমরা আদালতকে  নিজেদের আর্থিক অসহায়তার  কথা বারবার জানিয়েছি। একমাত্র সম্পত্তি কর থেকে যে অর্থ আদায় হয়  তা দিয়েই পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের বকেয়া মেটানো হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনে পুরসভার হয়ে অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় বিষয়টি পুরসভার জন্য একটি বড় স্বস্তি। আমরা আশা রাখছি পুরসভা  নিজেদের প্রাপ্য সম্পত্তি কর থেকেই ওই বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেবে।' কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের নির্দেশনামায় জানিয়েছেন, এর আগেই হাইকোর্টের বিভিন্ন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে কোনও সরকারি কর্মী অবসর নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে গ্র্যাচুয়িটির টাকা না দেওয়া গেলে  সুদ-সহ সেই টাকা দিতে হবে। বহরমপুর পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কলকাতা হাইকোর্ট ৮ শতাংশ বাৎসরিক সুদের হারে বকেয়া প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দিতে বলেছে। পুরসভার কর্মীদের আগামী ১০ মাসের মধ্যে যদি প্রাপ্য বকেয়া না মেটানো হয় তাহলে ১১ শতাংশ হারে  পুরসভাকে সুদ গুনতে হবে।  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের নির্দেশনামায় আরও জানিয়েছেন, বহরমপুর পুরসভা তাদের সম্পত্তি করের আয় থেকে যদি গ্র্যাচুয়িটির  টাকা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মেটাতে না পারে তাহলে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর এই নির্দেশিকা পালনের জন্য বহরমপুর পুরসভাকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করবে। কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, বহরমপুর পুরসভার ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশিকা দিয়েছে তা কার্যত রাজ্যের সমস্ত পুরসভায় অবসরপ্রাপ্ত স্থায়ী কর্মীদের বকেয়া মেটানোর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকেই দায়গ্রস্ত করে দিল। কলকাতা হাইকোর্টের এই যুগান্তকারী রায়ের ফলে বিভিন্ন পুরসভার পুরকর্মীরা অবসর নেওয়ার পর বকেয়ার যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চলেছেন বলে অনেকে মনে করছেন।
  • Link to this news (আজকাল)