ভিড় বাড়ছে রেডিও সারাইয়ের দোকানে, বাঙালি ফিরছে তার সাবেক নস্টালজিয়ায় ...
আজকাল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাত পোহালেই মহালয়া। আর মহালয়ার ভোর মানেই বাঙালির কাছে এক বিশেষ আবেগ। কাক ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর জলসগম্ভীর সুরে মহিষাসুরমর্দিনী যেন অব্যর্থ ভোরের ডাক। স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি, ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমিং—সবকিছু হাতে থাকলেও মহালয়ার সকাল রেডিও ছাড়া অসম্পূর্ণ বলেই মনে করেন সেইসব বাঙালি, রক্তে যাদের শিকড়ের টান।
মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সেই জলদগম্ভীর কন্ঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী' না শুনে আজও বাঙালির পুজো শুরু হয় না। এই এ. আই শাসিত 'ভুবনগ্রাম'-এ এভাবেও ফিরে আসা যায়! বর্ধমানের অন্যতম পুরনো মেকানিকের দোকান শান্তি রেডিও–তে তাই পুজোর আগে জমেছে ভিড়। দোকানের মালিক নিমাই মোদকের কথায়, 'প্রতি বছরই মানুষ রেডিও সরাতে আসেন। তবে এ বছর ভিড় কিছুটা বেশি। যতই নতুন অ্যাপ আসুক, রেডিওর আবেগটা যেন আলাদা।'
নিমাইবাবু জানান, 'ওই আবেগ এখনও পুরো হারিয়ে যায়নি। আমি ফুরসত পাচ্ছি না। সবাই চাইছে, 'তাড়াতাড়ি আমার রেডিও ঠিক করে দিন।' ৬০ বছর ধরে এই কাজ করছেন নিমাইবাবু। তিনি একজন শিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ। একটি নামী রেডিও কোম্পানিতে চাকরি করতেন ঝুমরিতালাইয়াতে। কাজ খুব ভাল বোঝেন এবং ৪০ বছর আগে এই দোকান খোলেন।
রেডিও মৃত। এটা মানতে চান না নিমাইবাবু। তাঁর কথায়, মোবাইল টাওয়ার ও অন্য নানা কারণে অনেক জায়গায় আগের মতো পরিস্কার সাউন্ড আসে না। তবু রেডিও থেকে যাবে। তিনি নিজে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডী পাঠ সামনে থেকে দেখেছেন। তাঁর কথায়, পৃথিবী থেকে কিছু জিনিস কখনও হারিয়ে যাবে না। যতই উন্নত প্রযুক্তি বা অন্য কিছু আসুক না কেন। ঠিক তেমনি বীরেনবাবুও থেকে যাবেন। আজও যেমন তিনি আছেন তেমনি ভবিষ্যতেও তিনি থাকবেন। এই দোকানে আসেন অশোক কুমার ঘোষ। কানে শব্দ বা কথা শোনার মেশিন। তবু রেডিও ছাড়তে পারেননি তিনি। তাঁর কথায়, যতদিন বীরেনবাবুর কন্ঠ বাজবে ততদিন এই টান থাকবে।
ক্রেতাদের মুখেও একই সুর। বাড়িতে টিভি কিংবা স্মার্টফোন থাকলেও মহালয়ার ভোরে রেডিও না বাজালে যেন পুজোর শুরুই হয় না। ঐতিহ্যের সেই সুর আজও ধরে রেখেছে রেডিও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে মহালয়ার ভোর মানেই তাই রেডিওর অনন্য আকর্ষণ। 'আশ্বিনের শারদ প্রাতে'র মধ্য দিয়ে।