মহালয়ার আগে পুজো মণ্ডপ উদ্বোধনে হিন্দুধর্মের রীতি ভেঙেছেন মুখ্যমন্ত্রী? শুভেন্দুকে পালটা চার জবাব কুণালের
প্রতিদিন | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: মহালয়ার একদিন আগেই পিতৃপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিজেপি, যাকে কুৎসা ও অপপ্রচারের বলে অভিহিত করে কড়া জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী শনিবার বিকেলে উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে পুজো উদ্বোধনে গিয়ে উৎসবের সূচনা প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আগামী কাল মহালয়ার তর্পণ হবে। মহালয়ার আগে আমি মাতৃমূর্তি উদ্বোধন করি না। আমি কেবল মণ্ডপের উদ্বোধক হিসেবে এসেছি।’’
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীকে টার্গেট করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ চার দফা যুক্তি ও তথ্য পেশ করে পাল্টা আক্রমণ করেন, ‘‘হিন্দুত্বের নাম করে ভুয়ো যুক্তি খাড়া করে মিথ্যাচার করছে বিজেপি। এরা ধর্মীয় রীতিনীতি এবং পাঁজি-পুঁথিও জানে না, আবার মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কোন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তাও জানা নেই।’’
বিরোধী দলনেতা শনিবার সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, ‘‘পিতৃপক্ষে পুজো উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু ধর্মের রীতি ভেঙেছেন।’’ পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, যুক্তি ও তথ্য ছাড়াই স্রেফ রাজনীতি করতে গিয়ে বিজেপি তথা বিরোধী দলনেতা কুৎসা ও মিথ্যাচার করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মহালয়ার আগের দিনের কর্মসূচি নিয়ে যে চার দফা তথ্য কুণাল তুলে ধরেছেন, সেগুলি হল- ১) মুখ্যমন্ত্রী পিতৃপক্ষে আদৌ কোনও পুজো উদ্বোধন করছেন না। উনি একাধিক মণ্ডপে যাচ্ছেন, সেখানে উৎসবের সূচনা করছেন। মনে রাখবেন ষষ্ঠীতে বোধনের আগে কেউই পুজো শুরু করতে পারবেন না। বিরোধী দলনেতা ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। ২) মুখ্যমন্ত্রীকে এ বছর তিন হাজারের বেশি পুজো উদ্বোধন করতে হচ্ছে। এটা যে কোনও উদ্বোধক তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সর্বকালীন রেকর্ড। এর মধ্যে কলকাতার কিছু পুজোতে সশরীরে পৌঁছে প্রদীপ জ্বালিয়ে মণ্ডপের উদ্বোধন করছেন তিনি। বাকি পুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। স্বভাবতই আমজনতার তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে যখন উদ্বোধন নিয়ে এত আগ্রহ এবং আবেদন জমা পড়েছে, তখন তাঁকে নিজের মতো করে উৎসবের সূচনার সময় এগিয়ে আনতে হয়েছে। এর সঙ্গে হিন্দু ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতি লঙ্ঘনের কোনও প্রশ্ন নেই। ৩) একাধিক পঞ্জিকাতে অনেক আগেই পুজো শুরুর কথা রয়েছে। পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোট রাজপরিবারের ১৬দিন আগেই পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। চলবে দশমী পর্যন্ত। এছাড়াও, মহালয়ার আগে-পরে রাজ্যের বেশ কিছু বনেদি বাড়িতেও নানা পৌরাণিক-ধর্মীয় রীতিনীতি মেনেও দেবী দুর্গার বন্দনা শুরু হয়েছে। যারা সস্তার রাজনীতি করতে নেমে মুখ্যমন্ত্রীর মণ্ডপ-উৎসবের সূচনা নিয়ে এমন মিথ্যাচার করছেন, জনগণ তাদের জবাব দেবে। ৪) মহালয়ার দিন ভোরবেলায় স্বর্গীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাষুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের সম্প্রচার পিতৃপক্ষেই করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান আকাশবাণীতে যখন প্রচার হয় তখন পিতৃতর্পণ করতে ব্যস্ত থাকেন বহু মানুষ। তাই দেবীপক্ষ শুরুর অজুহাত দেখিয়ে বিজেপি যে কুৎসা করছে তা হিন্দুধর্মের অসম্মানেরই নামান্তর।