দেরাদুন: শেষ মুহূর্ত অবধি চেষ্টা করেছিলেন সন্তানদের বাঁচাতে। কিন্তু লড়াই ব্যর্থ হল। যমজ দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়েই মৃত্যুবরণ করলেন মহিলা। শনিবার উদ্ধার হল তিনজনের নিথর দেহ। শনিবার এমনই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড।
চলতি বর্ষার মরশুমে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে পাহাড়ি এই রাজ্য। কখনও বন্যা, কখনও ধসের মতো বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার ফের ধস নামে দেবভূমির চামোলি জেলায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নন্দনগড় এলাকা। এখানকার লাগাফেলি, লাগাসরপানি, সেরা এবং ধ্রুমা—এই চারটি গ্রামে ৩৩টি বাড়ি, বেশ কয়েকটি দোকান এবং গোয়ালঘর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। নিখোঁজ হয় অন্তত ২০ জন বাসিন্দা। তাঁদেরই মধ্যে ছিলেন কুনওয়ার সিং। বৃহস্পতিবারের ধসে চাপা পড়ে তাঁদের বাড়ি। সেই সময় বাড়িতে ছিলেন কুনওয়ার, তাঁর স্ত্রী, দুই যমজ সন্তান ও আরও কয়েকজন। বাড়ি ভেঙে তাঁরা সকলেই মাটির তলায় চাপা পড়েন। শনিবার উদ্ধারকাজ চলাকালীন একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে কুনওয়ারের পরিবারের সদস্যদের দেহ। তখনও দেখা যায় দুই সন্তানকে বুকে আগলে ধরে আছেন কুনওয়ারের স্ত্রী কান্তা দেবী। যদিও মাটির তলায় ১৬ ঘণ্টা চাপা পড়ে থাকলেও জীবিত অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে কুনওয়ারকে। তবে পরিবারের সকলকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন ওই যুবক। আপাতত হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
শুধু কুনওয়ারই নন, এমন বিধ্বস্ত অবস্থা গ্রামের আরও অনেকেরই। চোখের সামনে নিজের স্ত্রীকে জলের তোড়ে ভেসে যেতে দেখেছেন গ্রামের বাসিন্দা সুবেদার মেজর দিলবর সিং রাওয়াত। ধসের জেরে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন গ্রামের অন্যতম বাসিন্দা সঙ্গীতা দেবী। আতঙ্কে ঘুম উড়েছে তাঁরও। ভয়ঙ্কর রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে গ্রামপ্রধান চন্দ্রকলা বলেন, মাঝরাতে হঠাৎ বৃষ্টির বেগ বেড়ে যায়। বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ কানে আসে। তারপর ভোরের আলোয় দেখলাম ধ্বংসের ছবি। আশপাশের সব ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে গোটা এলাকার মানচিত্রটাই। গত ৩২ ঘণ্টা দিনরাত এক করে উদ্ধারে নেমেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শীঘ্রই চাপা পড়া সমস্ত দেহ উদ্ধার করা যাবে বলে মনে করছেন বাহিনীর সদস্যরা।