• সবচেয়ে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী মোদি, আক্রমণ রাহুলের, এইচ-১বি ভিসার ফি ৮৯ লক্ষ, ফের কোপ ট্রাম্পের
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: ভারত নাকি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু! শুধু ভারত নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তাই তো তাঁর ৭৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতেও ভোলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমেরিকা থেকে এল ‘জন্মদিনের উপহার’ও—মার্কিন এইচ-১বি ভিসার ফি ১০০০ ডলার থেকে বেড়ে হচ্ছে ১ লক্ষ ডলার! ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকা। রাতে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব  ক্যারোলিন লেভিট টুইটে জানান, আগামী লটারির সময় থেকে শুধুমাত্র নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ডলার লাগবে। তবে এই অর্থ দিতে হবে একবারই। ইতিমধ্যে যাঁদের এই ভিসা রয়েছে কিংবা নবীকরণ করতে হবে, তাঁদের এই অর্থ লাগবে না। ৫০ শতাংশের শুল্কের বোঝা, ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার পর ভারতের উপর ফের কোপ ট্রাম্পের! শুক্রবার নতুন অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত এই নির্দেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ২১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ মহালয়ার দিন থেকেই কার্যকর হবে নতুন এই নিয়ম। আওতায় আসবেন আমেরিকায় বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত অধিকাংশ ভারতীয়। সংস্থাগুলিকেই মেটাতে হবে ওই টাকা। এর পরেই শনিবার মোদিকে দেশের ‘সবচেয়ে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধী সহ বিরোধী নেতৃত্ব।

    গত শতাব্দীর নয়ের দশকে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা হিসেবে এইচ-১বি চালু করে আমেরিকা। স্নাতক হলেই এই ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিত ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীরা এই ভিসার সাহায্যেই এতদিন মার্কিন মুলুকে চাকরি করেন। ২০১৭ সালেও এই ভিসা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। তখন আমেরিকায় প্রথম ট্রাম্প সরকার। ভিসা সমস্যা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কেন কথা বললেন না মোদি, সেই প্রশ্ন তুলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘দুর্বল’ আখ্যা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। এদিন সেই টুইট ফের পোস্ট করে কংগ্রেস সাংসদ লিখেছেন, ‘আমি ফের বলছি, ভারত একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে।’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও এদিন এক্স হ্যান্ডলে মোদির উদ্দেশে লেখেন, ‘আপনার জন্মদিনে ফোনের পর ‘আব কি বার, ট্রাম্প সরকার’ যে উপহার পাঠিয়েছে তাতে ভারতীয়দের কষ্টই হচ্ছে।’ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র লেখেন, ‘৫০ শতাংশ শুল্ক, তারপর ১ লক্ষ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি। নমোর সঙ্গে ‘ডোলান্ড’-এর বন্ধুত্ব ভারতের জন্য খুবই দামি হয়ে যাচ্ছে।’

    ট্রাম্পের অবশ্য দাবি, মার্কিন কর্মীদের স্বার্থেই এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। তিনি নির্দিষ্ট কোনও দেশের কথা না বললেও নতুন নিয়মে যে ভারতীয়রাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন, তা কার্যত স্পষ্ট। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস-এর তথ্য বলছে, ২০২৩ অর্থবর্ষে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭২ শতাংশই পেয়েছেন ভারতীয় নাগরিকরা। এতদিন এই ভিসার ফি নিয়োগকারী সংস্থাগুলিই দিত। কিন্তু একধাক্কায় ফি এতটা বেড়ে যাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদেরই এই টাকা গুনতে হবে বলে শঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকও জানিয়েছেন, সমস্ত বড় সংস্থাই তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। যদিও মাইক্রোসফ্ট, জে পি মরগ্যান বা অ্যামাজন কর্মীদের ২১ সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনও উপায়ে আমেরিকায় ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে। অন্য কর্মীদেরও আপাতত আমেরিকা ছাড়তে নিষেধ করেছে সংস্থাগুলি। যদিও হোয়াইট হাউসের এক কর্তা জানান, যাঁরা (এইচ-১বি ভিসাধারী) বাইরে রয়েছেন, তাঁদের রবিবারের মধ্যে আমেরিকায় ফেরার বা ১ লক্ষ ডলার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

    দু’বছর আগে আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন মোদি। সেবার ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রেগন বিল্ডিংয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের সভায় মোদি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এইচ-১বি ভিসা রিনিউয়ের জন্য আমেরিকার বাইরে যেতে হবে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবছরই পাইলট প্রজেক্ট চালু হবে। পরবর্তীতে এই সুবিধা পাওয়া যাবে এল ক্যাটিগরি ভিসাতেও। এই ঘোষণায় ‘মোদি’ ‘মোদি’ গর্জনে ফেটে পড়েছিল গোটা সভা। সেই ভিডিও এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ট্রেন্ডিং’। ২০০৫ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদি এও বলেছিলেন, ‘আমি সেদিনের অপেক্ষায়, যেদিন ভারতের ভিসা নেওয়ার জন্য লাইন দেবেন আমেরিকানরা।’ সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনদের কটাক্ষ, ১১ বছরের মোদি শাসনে ঠিক এর উল্টো দিন এসেছে। যদিও শনিবার ফের ‘আত্মনির্ভরতা’র পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গুজরাতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভারত এখন বিশ্ববন্ধু হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। সারা বিশ্বে আমাদের কোনও বড় শত্রু নেই। আমাদের যদি কোনও শত্রু থাকে, তাহলে তা হল অন্য দেশের উপর নির্ভরতা। যত বেশি অন্য দেশের উপর নির্ভর করব, ততই দেশ ব্যর্থতার পথে এগিয়ে যাবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)