মহালয়ার সকালে উৎসবের আবহে জড়িয়ে আছে বাঘাযতীনের রোড রেস
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: মহালয়া বলতে উৎসব প্রিয় বাঙালির কাছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী। এই বিশেষ দিনটিতে যা শোনার জন্য রাত জেগে থাকে সকলে। ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে দলে দলে মানুষ বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। সর্বত্র নদীঘাটে ভিড় জমায়। পিতৃপক্ষের অবসান মাতৃপক্ষের শুরুর সন্ধিক্ষণে পিতৃতর্পণের মধ্য দিয়ে মানুষ উৎসবের আবহে নিজেকে যুক্ত করে।
৪০ বছর আগে শিলিগুড়িতে মহালয়া নিয়ে এই ধারণার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। শিলিগুড়িতে মহালয়া মানে পিতৃতর্পণ করা বা দেখার জন্য শুধু নদীঘাটে ভিড় করা নয়, তার পাশাপাশি রাস্তার ধারে কাতারে কাতারে মানুষের প্রতীক্ষা দৌঁড় দেখার।
শিলিগুড়ির বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাব মহালয়ার সকালে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ‘রোড রেস’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এই দৌড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়িতে মহালয়ার সকালটা একটু অন্যরকম। তাই শিলিগুড়িবাসীর কাছে মহালয়ার উৎসবের একটি অন্যতম দিক হয়ে উঠেছে এই দৌড়। প্রথমে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা ছিল। বাগডোগরা অগ্রগামী স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হতো। চা বাগান, নদী পেরিয়ে হিলকার্ট রোড, শহরের আশ্রমপাড়া হয়ে কলেজ মাঠে ক্লাব চত্বরে এসে দৌড় প্রতিযোগিতা শেষ হতো। পরবর্তীতে রুট বদল করে এটি রোড রেস করা হয়।
প্রথম এই দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেছিলেন বাংলা তথা দেশের কৃতী অ্যাথলিট রীতা সেন। শিলিগুড়িবাসীর কাছে এই দৌড় প্রতিযোগিতা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ, প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভারতীয় ক্রীড়া জগতের সেলিব্রিটিদের উপস্থিতি।
সেইসময় শিলিগুড়িতে বিখ্যাত খেলোয়াড়দের চাক্ষুষ করার সুযোগ খুব কমই ছিল। তাই রিতা সেন, মিলখা সিং, পিটি উষা, সাইনি আব্রাহাম, সাইনি উইলসন, গুরুবক্স সিং, কপিলদেব, আশিস নেহেরা, ইরফান পাঠান, জ্যোৎস্না বর্মনরা এসেছেন। প্রিয় তারকাদের নিজের শহরে চাক্ষুষ করার সুযোগ পাওয়ার কারণেই বাঘাযতীন ক্লাবের এই দৌড় প্রতিযোগিতাকে ভালোবেসে ফেলেছে শিলিগুড়ির মানুষ। এবার এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধক আরএক তারকা ক্রিকেটার সদানন্দ বিশ্বনাথ। প্রাক্তন এই উইকেটকিপার ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বেনসন হেজেস কাপ ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে সকলের নজর কেড়েছিলেন।
গ্ল্যামার বাড়তে যুক্ত হয় আকর্ষণীয় আর্থিক পুরস্কার। বিভিন্ন রাজ্যের জাতীয় স্তরের অ্যাথলিটরা অংশ নিচ্ছেন এখন। শহরে অ্যাথলেটিক্সের প্রসার ঘটানো এই দৌড় প্রতিযোগিতার একটি অন্যতম কারণ। সেইমতো বাঘাযতীন ক্লাব সহ শিলিগুড়ির বেশকিছু জায়গা থেকে একের পর এক কৃতী অ্যাথলিট উঠে এসেছে।
ক্লাবের সম্পাদক প্রসূন দাশগুপ্ত বলেন, ম্যারাথন দৌড় দিয়ে এই প্রতিযোগিতার যাত্রা শুরু হয়েছিল ৪০ বছর আগে। পরবর্তীতে যা রোড রেস করা হয়। সেইসঙ্গে ১০ ও ৫ কিমি দু’টি দূরত্বে এবার দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়েছে।