দেবীর নিরঞ্জনে নদীর ঘাটে যান না রায়চৌধুরী পরিবারের মহিলারা
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সুমন রায় রায়গঞ্জ
ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত রায়গঞ্জের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো আজও নজর কাড়ে উত্তর দিনাজপুর জেলাবাসীর। দেড়শো বছরের পুরনো এই পুজো এখনও বংশপরম্পরায় করছেন রায়চৌধুরী পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মরা। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস।
১৮৫৭ সালে অবিভক্ত বাংলার হরিপুরের জমিদার ঘনশ্যাম কুণ্ডুর হাত ধরে শুরু হয় এই পুজো। পরবর্তীতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার জমিদার ঘনশ্যাম কুণ্ডুকে রায়চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তারপর থেকে এই পরিবার রায়চৌধুরী পরিবার নামে খ্যাত। শোনা যায়, জমিদার বাড়ির এই পুজোয় দেবী দুর্গার হাতে থাকত তলোয়ার। যা সেসময় সিপাহী বিদ্রোহে এক সেনা ব্যবহার করতেন। বহুবছর ধরে দেবীর এক হাতে সেই তলোয়ার থাকত। এখন অবশ্য তার পরিবর্তে প্রতীকি হিসেবে রূপোর তৈরি খড়্গ শোভা পায় রায়চৌধুরী বাড়ির দেবীর হাতে।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন বাদে এপারের রায়গঞ্জ শহরে চলে আসে রায়চৌধুরী পরিবার। চৌধুরী পরিবারের ছেলে নগেন্দ্র বিহারী রায়গঞ্জে এই পুজোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দুর্গার আরাধনা করেন। আজও এই পুজো হয়ে আসছে।
রায়চৌধুরী পরিবারের উত্তরসূরী শিবশঙ্কর বলেন, প্রপিতামহ নগেন্দ্র বিহারী রায়চৌধুরী রায়গঞ্জে এই পুজো শুরু করেন। তার আগে ওপারে এই পুজো হতো। একচালার প্রতিমায় পুজো হয়। যে কাঠামো ওপার থেকে নিয়ে আসা। পুরনো রীতি মেনে আজও গণেশের পরিবর্তে কার্তিকের পাশে রাখা হয় কলাবউ। কুলিক নদীতে নিরঞ্জন হয় দেবী দুর্গার।
রায়চৌধুরী বাড়ির বড় বউ বিউটি বলেন, আমাদের পুজোয় কোনও অন্নভোগ হয় না। মা দুর্গাকে ক্ষীর দেওয়া হয়। সঙ্গে লুচি, সুজি, ফল, খই ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। ভোগে কোনওরকম হলুদ, লবণ ব্যবহৃত হয় না। বাড়ির সকলে এই পুজোয় অংশ নিলেও নিরঞ্জনের সময় পরিবারের বিবাহিত মহিলারা কেউ ঘাটে যান না।