কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে দেবী দুর্গা পূজিতা হন রাজরাজেশ্বরী রূপে
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্যই সারা রাজ্যে পরিচিত কৃষ্ণনগর। তবে এশহরের ঐতিহ্য, গৌরব ও আভিজাত্যের প্রতীক রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। ৩০০বছরের বেশি পুরনো এই পুজো শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এর সঙ্গে নদীয়ার মানুষের ইতিহাস, আবেগ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় জড়িয়ে রয়েছে। এখনও এই দুর্গাপুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভক্ত ও ইতিহাস-অনুরাগীরা আসেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৬৮৩সালে মহারাজা রুদ্র রায় এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। নদীয়ার মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অশুভ শক্তির বিনাশের প্রার্থনায় তিনি পুজো শুরু করেছিলেন। প্রাসাদের কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্গামন্দির। এখানেই দেবী দুর্গা ‘রাজরাজেশ্বরী’ রূপে পূজিতা হন। অন্য দুর্গাপুজোর চেয়ে এখানে দেবীর রূপ সম্পূর্ণ আলাদা। প্রচলিত ডাকের সাজের বদলে এখানে এক বিশেষধরনের সাজে দেবীপ্রতিমা সাজানো হয়। যা ‘বেদেনী ডাক’ নামে পরিচিত। এই প্রতিমার সামনের দুই হাত বাকি আট হাতের তুলনায় ছোট, যা প্রতিমাকে একটি অন্য রূপ দিয়েছে। কৃষ্ণনগরবাসী বিশ্বাস করেন, দেবী রাজরাজেশ্বরী সম্পদের দেবী লক্ষ্মীরই এক রূপ, যিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করে জনগণকে রক্ষা করেন।
মহালয়ার পরদিন রাজবাড়িতে হোমাগ্নি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে পুজোর মূল আচার শুরু হয়। সেই আগুন নবমী অবধি অবিরাম জ্বলতে থাকে। যা শক্তি ও পবিত্রতার প্রতীক। একসময় সন্ধিপুজোর সময় কামান দাগার প্রথা ছিল, যা বহু দূর থেকে শোনা যেত। এখন সেই প্রথা নেই। তবে রাজপরিবারের সদস্য ও পুরোহিতরা ১০৮টি প্রদীপ জ্বালান। রাজবাড়ির সিঁদুরখেলা কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ। সেদিন রাজবাড়ির আঙিনায় কয়েকশো মহিলা সিঁদুর খেলেন। তাঁদের ভক্তি, হাসি ও উল্লাসে প্রাসাদের প্রতিটি কোণ রাঙা হয়ে ওঠে।
রাজবাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষ আচার-‘শত্রুবধ’। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই আচার শুরু করেছিলেন। তখন তিনি দেবী দুর্গার কাছে শক্তিলাভের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। যাতে তিনি অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে প্রজাদের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন। এখনও প্রতিমা নিরঞ্জনের পর রাজপরিবারের একজন সদস্য তিরধনুক দিয়ে মাটির তৈরি প্রতীকী শত্রুমূর্তিতে আঘাত করেন। রাজপরিবারের বধূ অমৃতা রায় বলেন, আমাদের পুজো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই নিয়মে হয়ে আসছে। আমাদের এই পুজো ঘিরে শহরবাসীর আবগ জড়িয়ে রয়েছে। প্রতিপদ থেকেই পুজো শুরু হবে।-নিজস্ব চিত্র