লালগোলার রাজপরিবারের নামেই সংকল্প করে বারোয়ারি কমিটি
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, লালবাগ: রাজা নেই। রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যরাও পুজোর আয়োজন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। সেই পুজো এখন পরিচালনা করে বারোয়ারি কমিটি। তা সত্ত্বেও প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে রাজপরিবারের নামে সংকল্প করে লালগোলার বাঁশগাড়া পাকা কাছারি দুর্গামন্দিরে পুজো শুরু হয়।
কালমেঘার বাঁশগাড়া, সরকারপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দারাই ৬০বছরের বেশি সময় ধরে দেবীর আরাধনা করে চলেছেন। পুজোর কয়েকদিন এলাকার বাসিন্দারা উৎসবে মেতে ওঠেন। মন্দির লাগোয়া এলাকায় গ্রামীণ মেলাও বসে। আগে পুজো শেষে একাদশীর দুপুরে মন্দিরের পিছন দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদে প্রতিমা নিরঞ্জন হতো। ভৈরব অনেক আগেই গতি পরিবর্তন করে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। তবে এখনও প্রাচীন রীতি মেনে ভৈরবের পরিত্যক্ত গতিপথের ডোবায় প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় প্রকৃত অর্থেই দানশীল ও প্রজাহিতৈষী ছিলেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল সরবরাহ সহ একাধিক ক্ষেত্রে তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের সুফল এখনও মুর্শিদাবাদ জেলা তথা রাজ্যের বাসিন্দারা ভোগ করছেন। প্রজাদের ভালো রাখাই তিনি অন্যতম প্রধান রাজধর্ম বলে মনে করতেন। বছরের ক’টা দিন প্রজাদের জীবন আনন্দে ভরিয়ে তুলতেই প্রায় ১৫০বছর আগে লালগোলা থানার কালমেঘা অঞ্চলের বাঁশগাড়া পাকা কাছারি বাড়িতে মহারাজা দুর্গাপুজো চালু করেন। সেসময় প্রজাদের সঙ্গে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে ষষ্ঠী থেকে একাদশী পর্যন্ত ছ’দিন মহারাজা সপরিবারে কাছারি বাড়িতে থাকতেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রজাদের আর্থিক অবস্থা পরখ করতেন। দুঃস্থ প্রজাদের খাজনা মকুব করতেন।
পুজোর উপহার হিসেবে গ্রামবাসীদের মধ্যে নতুন জামাকাপড় বিলি করতেন।
গ্রামের প্রবীণরা জানালেন, রাজার নির্দেশে পুজোর চারদিন কাছারিপাড়া সহ আশপাশের গ্রামে উনুন জ্বলত না। প্রজারা রাজার আতিথ্য গ্রহণ করে তিনবেলা পেটপুরে খেতেন। কেউ যাতে অনুপস্থিত না থাকেন, সেজন্য বিশেষ হাজিরার ব্যবস্থা থাকত। খানাপিনা, গানবাজনার কমতি ছিল না।
সাতের দশকে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর মানিকচক গ্রামের বাসিন্দা মিহিরকুমার রায় নিজের উদ্যোগে পুজো চালু করেন। এর কয়েকবছর পর গ্রামবাসীরা বাঁশগাড়া পাকা কাছারি দুর্গামন্দির কমিটি গঠন করেন। তারপর থেকে ওই কমিটি পুজো চালিয়ে যাচ্ছে। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ দিলীপ সরকার বলেন, রাজা নেই। তাই পুজোর আয়োজনে সেই জৌলুসও নেই। তবে রাজার চালু করে যাওয়া রীতির পরিবর্তন করা হয়নি। এখনও নিয়ম মেনে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে মন্দিরের সামনে বসিয়ে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। রথের দিন দুর্গামন্দিরে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। মায়ের ভোগে নিয়ম মেনে খিচুড়ি, পাঁচতরকারি, মাছ দেওয়া হয়। নবমীতে ইলিশ মাছ সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয়।-নিজস্ব চিত্র