• স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সিউড়ি জেলা সংশোধনাগারে শুরু হয় উমার আরাধনা
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: তখন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল হচ্ছে বাংলা। স্বাধীনতা আন্দোলনকে সংগঠিত করে সাহেবদের রাতের ঘুম উড়িয়েছে স্বদেশীরা। বীরভূম ষড়যন্ত্র মামলার বন্দিদের রাখা হয়েছে সিউড়ি কারাগারে। সেই সময়ই ব্রিটিশ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে সিউড়ি জেলা সংশোধনাগারে শুরু হয় উমার আরাধনা। পুজোয় মাতেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও। সেই থেকে সংশোধনাগারের পুজো কখনও বন্ধ হয়নি। আজও মহাসমারোহে যথাযথ নিয়ম মেনে সংশোধনাগারের আবাসিক বন্দিরা কালের নিয়মে উমার আরাধনা করে আসছেন। 

    তবে, সেসময় এই সংশোধনাগার সিউড়ি কারাগার নামে পরিচিত ছিল। এখন পুজোর আয়োজনের দায়িত্ব সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে। এবছর ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ পুজোর আয়োজনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। সংশোধনাগারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই বন্দি আবাসিকরা দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠেন। এবারও পুজো হবে। এবছরও তার অন্যথা হবে না। ইতিমধ্যে আয়োজন শুরু হয়েছে। পুজোর সময়কালে সকল বন্দি আবাসিকদের জন্য বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। মেনুতে মাছ ও মাংসও থাকে।

    হাতে আর মাত্র ক’টা দিন বাকি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সর্বত্র বনেদি বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তার পুজোর আয়োজনে মেতে উঠেছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুজোর আয়োজন শেষ করার লক্ষ্য নিয়েই তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে সিউড়ির সংশোধনাগারেও অবশ্য একই ছবি ধরা পড়ছে। ইতিমধ্যে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ বন্দি আবাসিকদের পুজোর আনন্দে মাতিয়ে তুলতে আয়োজনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, পুজোর ক’টা দিন সংশোধনাগারের অন্দরমহলেও পুজোর আবহ তৈরি হয়। ষষ্ঠীতে উমার বোধন থেকে শুরু করে দশমীতে বিসর্জন সবটাই চলে নিয়ম মেনে। পুজোয় অংশ নেন বন্দি আবাসিকরা। অঞ্জলি থেকে শুরু করে পেট পুজো কোনও কিছুই বাদ যায় না। 

    সিউড়ির ওই সংশোধনাগারে বর্তমান সময়ে চার শতাধিক শতাধিক বন্দি আবাসিক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জনা কুড়ি মহিলাও রয়েছেন। সাময়িকভাবে তাদের জীবন চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও উৎসবের আনন্দে গা ভাসাতে অবশ্য মানা নেই। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখেই অন্দরমহলে পুজোর সমস্ত আয়োজন করা হয়। বন্দি আবাসিকদের ওই পুজোতে সংশোধনাগারের কর্মী সহ আধিকারিকরাও শামিল হন। তবে, পুজোর সময়কালে বন্দি আবাসিকদের জন্য বড় চমক থাকে পেটপুজোতে। সেসময় জলখাবার থেকে শুরু করে দুপুরের মেনুতে আমূল পরিবর্তন ঘটে। এবারও তার অন্যথা হচ্ছে না। সপ্তমী থেকে দশমী, এই চারদিন জলখাবারের মেনুতে কখনও ঘুগনি-মুড়ি কিংবা পাউরুটি, আবার কখনও পায়েস থাকবে। অন্যদিকে, দুপুরের খাবারে মাছ, মাংস থেকে শুরু করে নানা ধরনের সুস্বাদু পদ বন্দি আবাসিকদের পাতে তুলে দেওয়া হবে। এই ক’টা দিন সব ভুলে আনন্দে মেতে উঠবেন বন্দিরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)