• সিউড়ির নওয়াডিহি গ্রামের পুজো, চতুর্ভুজা দেবী দুর্গা পশ্চিমমুখী
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শুভদীপ পাল , সিউড়ি:

    মা এখানে দশভুজা নন, চতুর্ভুজা। এমনকী, পশ্চিমদিকে প্রতিমার মুখ রেখে দেবী দুর্গার পুজো করা হয়। বেদীতে তোলার পর পিছন থেকে প্রতিমাকে বেঁধেও রাখা হয়। এমনই অভিনব দুর্গাপুজো হয়ে থাকে সিউড়ি-১ ব্লকের নগরী নওয়াডিহি গ্রামে মজুমদার বাড়িতে। বহু বছর ধরে এভাবেই মা দুর্গার পুজো হয়ে আসছে। এলাকার বাসিন্দারা এই চতুর্ভুজা মায়ের কাছে নিয়মিত পুজো করে থাকেন। তবে কেবল নগরী নয়। আশপাশের এলাকায়ও এই পুজোর যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের শতাব্দীপ্রাচীন ওই দুর্গাপুজোর পাশাপাশি আরও একটি দুর্গাপুজো রয়েছে তা রায় পরিবারে। তবে সেটি পটের। প্রতিমায় পুজো বলতেই গ্রামে এই একটি পুজো হয়। কিন্তু কেন এই ভিন্ন রীতি মেনে মা দুর্গার পুজো হয়ে থাকে সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কারও কাছে পাওয়া যায়নি। তবে, পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, মজুমদারেরা আদতে বর্ধমানের বাসিন্দা। দৌহিত্র সূত্রে এই পুজো পেয়েছিলেন। কোনও তন্ত্রসাধক এই ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে পুজো করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, মায়ের পুজো পঞ্চমুণ্ডির আসনে হয়ে থাকে। অর্থাৎ তন্ত্রসাধনার নিয়ম মেনে। এছাড়া কথিত আছে, ১০৮টি খুলির উপর স্থাপিত হয় বেদী। তাতেই মায়ের পুজো হয়। কথিত আছে তন্ত্রসাধকের দেখানো পথেই আজও চতুর্ভুজা দুর্গার পুজো হয়ে আসছে। তবে প্রতিমার বেদী বা তন্ত্রসাধনার কিছু কথা প্রচলিত থাকলেও কেন দেবী চতুর্ভুজা কিংবা কেন পশ্চিমমুখী সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। পরিবারের সদস্যরা জানান, আমরা মন্দির বানিয়েছি নতুন করে। কিন্তু বেদী আজও ওইটাই আছে। ওখানেই মায়ের পুজো হয়। তবে প্রতিমা কেন পিছন থেকে বেঁধে রাখা হয় সেই প্রশ্নের উত্তরে মজুমদার পরিবারের সদস্যরা জানান, একবার সন্ধিপুজোর সময় প্রতিমা বেদি থেকে পড়ে যায়। তারপর থেকে বেঁধে রাখার যে রেওয়াজ চালু হয়েছিল তা আজও জারি আছে।

    নওয়াডিহি গ্রামে গেলে দেখা যাবে, গ্রামের মধ্যে চতুর্ভুজা দুর্গার মন্দির। মন্দিরের দু’পাশে মজুমদার পরিবারের দুই শরিকের ঘর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে মজুমদার পরিবারের শরিক বলতে এই দুই ঘর। প্রয়াত কৃষ্ণগোপাল মজুমদার এবং গৌরগোপাল মজুমদারদের পরিবার। গ্রামে থাকেন একমাত্র গৌরগোপালবাবুর মেজ ছেলে হরিসাধনবাবু। হরিসাধনবাবুর বাকি তিন ভাই এবং কৃষ্ণগোপালবাবুর একমাত্র ছেলে কার্তিক মজুমদাররা সকলেই বাইরে থাকেন। তবে যে যেখানেই থাকুক পুজোর সময় সকলে হাজির হন বীরভূমের এই গ্রামে। পরিবারের সদস্য কার্তিক মজুমদার এবং হরিসাধন মজুমদার জানান, আগে পুজোয় বলির রীতি ছিল। কিন্তু তা এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে আজও বির্সজনের সময় মা-কে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় নওয়াডিহি গ্রামের মাঠে। সেখানে একটা মেলা হয়। আগে তো সেখানে লাঠিখেলা থেকে শুরু করে নানান ধরনের খেলা হতো। কিন্তু এখন মেলা হয় ও বাজি পোড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এও যেন এক রীতি হয়ে উঠেছে। এলাকার বাসিন্দা সৌভিক রায় বলেন, এই পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের সকল মানুষ মেতে ওঠেন। তবে কেবল নগরী পঞ্চায়েত এলাকা নয়, আশপাশের এলাকা থেকেও প্রচুর মানুষ পুজো দিতে আসেন।
  • Link to this news (বর্তমান)