দুর্ঘটনা এড়াতে নবদ্বীপের গঙ্গার ঘাটগুলিতে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সমীর সাহা নবদ্বীপ
শাস্ত্রমতে তীর্থস্থানে তর্পণ করার মধ্যে আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে। ফলে মহালয়ার পুণ্যলগ্নে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করতে প্রচুর মানুষ বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপ ধামে আসেন। প্রতিটি গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমে। তাই ঘাটগুলিতে দুর্ঘটনা এড়াতে পুরসভার তরফে বাঁশ এবং নেট দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মাইকের মাধ্যমে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হবে। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও থাকছে। নদীপথেও থাকবে বিশেষ নজরদারি।
মহালয়া মানেই পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনা। এই তিথিতে পুণ্যস্নান ও পূর্বপুরুষের স্মৃতির উদ্দেশে তর্পণ করতে নবদ্বীপের রানির ঘাট, বড়ালঘাট, পোড়াঘাট, শ্রীবাসঅঙ্গন ঘাট, ফাঁসিতলা ঘাট, মণিপুর ঘাট, প্রাচীন মায়াপুর জন্মস্থানঘাট সহ বিভিন্ন ঘাটে ভোর থেকেই ভিড় উপচে পড়ে। প্রতি বছর মহালয়ার এই পুণ্যতিথিতে স্নান ও তর্পণ করতে শুধু স্থানীয়রাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী নবদ্বীপে আসেন। ট্রেনে-বাসে, বাইকে, টোটোয় কিংবা চারচাকা গাড়ি ভাড়া করে পুণ্যভূমি নবদ্বীপে আসেন। ভাগীরথীর প্রতিটি ঘাটে পুরোহিতদের সহায়তায় পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশে তর্পণ করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনার্থে জলদান করেন। ভাগীরথীতে জলস্ফীতি হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ দূরত্বে থেকে তর্পণ করার জন্য পুরসভা ও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, দুর্ঘটনা এড়াতে সবরকম সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, নবদ্বীপ তীর্থভূমি। এই শহরে চৈতন্যদেবের আবির্ভাব হয়েছিল। মহালয়া উপলক্ষ্যে শুধু নবদ্বীপ নয়, বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এদিন পবিত্র গঙ্গাস্নান করতে আসেন। মহালয়ার ভোর থেকে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করতে নবদ্বীপের বিভিন্ন ঘাটগুলিতে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। নিরাপত্তার কারণে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া থাকবে। পুণ্যার্থীরা সুষ্ঠুভাবে লাইন দিয়ে স্নান করবেন। যাতে স্নান করতে গিয়ে কেউ বিপদে না পড়েন। সেজন্য স্নানের ঘাটগুলি নেট দিয়ে ঘেরা থাকবে। পুরসভার স্বেচ্ছাসেবকরা যেমন থাকবেন, তেমনি পুলিশ-প্রশাসনও থাকবে। স্পিডবোট এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কর্মীরা সর্বদা জলপথে বিভিন্ন স্নানের ঘাটগুলিতে নজরদারি চালাবেন। যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য নবদ্বীপ পুরসভা সবসময় সতর্ক। আমরা চাই, মহালয়ার পুণ্যলগ্নে আগত পুণ্যার্থীরা পুণ্যস্নান সেরে সুস্থভাবে নিজের বাড়িতে ফিরে যান। সেজন্য প্রতিটি ঘাটেই মানুষকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিশেষভাবে সচেতন করা হবে।
নবদ্বীপের গবেষক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, শাস্ত্রমতে এদিন পূর্বপুরুষের আত্মা মর্তে আসেন। মহালয়া শুধু একটি উৎসবের সূচনা নয়, এটি পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এইদিনে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তর্পণ করলে পরিবারের কল্যাণ হয়। এমনই বিশ্বাস করা হয়। তাই গঙ্গার ঘাটগুলিতে ভিড় হয়। তবে, গঙ্গা ছাড়া তর্পণ করা যাবে না, তেমনটাও নয়। পাশাপাশি, দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন এবং অসুর বধের এই পৌরাণিক কাহিনীকে স্মরণ করে ভক্তরা এই দিনটি উদ্যাপন করেন।