• এবার পুজোর ‘অফবিট’ ডেস্টিনেশন হোক খেজুরির হিজলি মসনদ-ই-আলা
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সৌমিত্র দাস  কাঁথি

    পুজোয় তো দীঘা-মন্দারমণি-তাজপুর ‘কমন’। তবে কোলাহল এড়িয়ে যাঁরা ‘অফবিট’ বেড়ানোর জায়গা খোঁজেন, তাঁদের জন্য আদর্শ হতে পারে খেজুরির নিজকসবার হিজলি মসনদ-ই-আলা। রসুলপুর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি রয়েছে। প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন মসনদ-ই-আলার মাজারকে ঘিরেই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। যা খেজুরির একমাত্র স্বীকৃত পর্যটন কেন্দ্র। স্নিগ্ধ, মনোরম সৈকত এবং ঝাউবন ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে মসনদ-ই –আলা। তবে, শুধু মসনদ-ই-আলা নয়, খেজুরিতে আছে আরও অনেককিছুই। সমুদ্রতীর ধরে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে গেলে খেজুরিতে রয়েছে প্রাচীন বন্দরের ধ্বংসাবশেষ সমৃদ্ধ এলাকা। সপ্তদশ শতকে খেজুরি বন্দর গড়ে উঠেছিল। খেজুরিতেই রয়েছে হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত দেশের প্রথম পোস্টঅফিস। রয়েছে ইউরোপিয়ান গ্রেভইয়ার্ড, প্রাচীন ভগ্নপ্রায় ডাকবাংলো সহ নানা দর্শনীয় স্থান। অর্থাৎ সারাদিন ইতিহাসের সরণি পরিক্রমার সুবর্ণ সুযোগ।  

    প্রসঙ্গত, হিজলি মসনদ-ই-আলার মাজারটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পরিচিত নাম। তবে এখানে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও আসেন তাঁদের মানতপূরণের আশায়। মাজার এবং পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে এখানে শতাধিক দোকানপাট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনিক উদ্যোগে শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। শীতকাল হোক বা গ্রীষ্মকাল-এখানে সারাবছরই মাজারে তীর্থ করার জন্য কিংবা স্রেফ বেড়ানোর জন্য বহু মানুষ ভিড় জমান। শীতকালে পিকনিকে করতে যেন মেলা বসে যায়। যদিও এখানে সরকারি উদ্যোগে থাকার জায়গা নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হোটেল-লজ ও গেস্টহাউস রয়েছে। আগত মানুষজনের সেখানেই থাকার সুযোগ রয়েছে। দীঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়কে হেঁড়িয়া থেকে বিদ্যাপীঠ হয়ে যেমন মসনদ-ই-আলায় আসা যায়, তেমনি  কাঁথি থেকে পেটুয়াঘাট হয়ে রসুলপুর নদী পেরিয়েও পৌঁছনো যায়। 

    খেজুরিতে তৎকালীন সময়ে যখন বন্দর গড়ে উঠেছিল, তখন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার জন্য গড়ে উঠেছিল পোস্টঅফিস। বর্তমানে সেই ভগ্নদশাপ্রাপ্ত পোস্টঅফিসের অববিশষ্টাংশের দর্শন মিলবে, যা সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হওয়ার পথে। সামনেই বনদপ্তরের বাজকুল রেঞ্জ অফিসের গায়েই রয়েছে সাজানো-গোছানো সুদৃশ্য পার্ক। পরিবেশ-বান্ধব এই পার্কে সব বয়সের মানুষ বেড়াতে আসেন। রয়েছে ইউরোপিয়ান গ্রেভইয়ার্ড। তৎকালীন সময়ে বন্দরের যাঁরা কর্মচারী, সাহেব-সুবো কিংবা পোস্টঅফিসের কর্মী ছিলেন, তাঁরা মারা গেলে এখানে সমাধিস্থ করা হতো। সংস্কারের অভাবে সমাধিগুলি ভগ্নদশা, আগাছায় পরিপূর্ণ। রাজা রামমোহন রায় ১৯৩০সালে খেজুরি বন্দর থেকেই পালতোলা নৌকায় ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ১৯৪২সালে বিলেত যান প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরও। এখানে দু’জনের আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। রয়েছে ভগ্ন ডাকবাংলো। খেজুরিতে রয়েছে পোর্টট্রাস্টের অফিসও। কিছুটা এগিয়ে গেলেই পড়বে সৎসঙ্গ মন্দির। আধ্যাত্মিক পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ। 

    সামনেই রয়েছে হুগলি নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা। নদীতীরে ঝাউ ও অন্যান্য গাছগাছালিতে ভরা প্রাকৃতিক পরিবেশ অনন্য। বহু মানুষ এখানে  বেড়াতে আসেন, সময় কাটান। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ করে অনুভব ও মননে চনমনে হয়ে উঠবেন আপনি। সুন্দরভাবে একটি দিন কেটে যাবেই। খেজুরির মুরলীচকের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক সুমননারায়ণ বাকরা বলেন, খেজুরির পর্যটন কেন্দ্র ও ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থানগুলিকে নিয়ে একটি পর্যটন সার্কিট গড়ে উঠতে পারে। এবিষয়ে সরকারি উদ্যোগ চাই। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, খেজুরির বন্দরের ধ্বংসাবশেষ সহ ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থানগুলিকে নিয়ে পর্যটন সার্কিট গড়ে তোলার ব্যাপারে ইতিপূর্বে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। একটি প্রকল্প তৈরি করে আগেই পর্যটন দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।  
  • Link to this news (বর্তমান)