• মঙ্গলকোটের তিন গ্রামে দুর্গার বদলে পুজো হয় কলাবউয়ের
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  •  অনিমেষ মণ্ডল  কাটোয়া

    মহালয়ার পুণ্যতিথিতেই বাঙালির শারদীয়া উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। এদিনই পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। তখন থেকেই পুজোর দিনগোনা শুরু হয়ে যায়। গোটা বাংলাজুড়ে সাজো সাজো রব উঠে যায়। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম, ইট্টা ও ভাল্যগ্রামের ছবিটা আলাদা। এই তিনটি গ্রামে দুর্গা প্রতিমার পুজো হয় না। বদলে গ্রামগুলিতে কলাবউকেই মা দুর্গা জ্ঞানে পুজো করা হয়। এভাবেই ওই তিন গ্রামের বাসিন্দারা শারদীয়ার আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে মাটির প্রতিমা না থাকার আক্ষেপ থাকলেও পুজোর অনাবিল আনন্দ থেকে বাসিন্দারা বঞ্চিত হন না।

    সতীর ৫১পীঠের মধ্যে একটি হল মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম। এখানকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা যোগাদ্যা। ক্ষীরগ্রামের বাসিন্দারা বেশকিছু নিয়ম মেনে চলেন। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে নতুন নিয়ম চালু হয়। পয়লা বৈশাখ থেকেই তা মেনে চলা হয়। সারাবছরই দেবীর বিশেষ নিয়ম আছে। তবে কিছু নিয়ম বৈশাখের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত মানা হয়। ওইদিন মা যোগাদ্যার মহাপুজো। ক্ষীরগ্রামের বাসিন্দাদের কাছে আবেগের আরেক নাম মা যোগাদ্যা। তাই মা ক্ষুণ্ণ হবেন, এমন কাজ থেকে তাঁরা বিরত থাকেন। পরম্পরায় রীতি মেনেই এখানে অনেক পুরনো রেওয়াজ চালু আছে।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ক্ষীরগ্রামে কোনও দুর্গামূর্তির পুজো হয় না। পরিবর্তে এখানে কলাবউকেই দুর্গাজ্ঞানে পুজো করা হয়। শুধু ক্ষীরগ্রামেই নয়, পার্শ্ববর্তী ইট্টা গ্রামেও একই রেওয়াজ চালু আছে। কারণ মহিষাসুরমর্দিনী রূপে মা যোগাদ্যা এখানে অধিষ্ঠান করে রয়েছেন। তাই মা যোগাদ্যা ব্যতীত আর কোনও দুর্গামূর্তির পুজো হবে না। এই নিয়ম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। দুর্গাপুজোর সমস্ত আচার মেনে চারদিন ধরে কলাবউকেই পুজো করা হয়। সপ্তমীর দিন নবপত্রিকার স্নান থেকে শুরু করে ঘট এনে পুজো করা হয়। ক্ষীরগ্রামে পাঁচ-ছ’টি বাড়িতেও কলাবউকেই দুর্গারূপে পুজো করা হয়। দশমীর দিন কলাবউকেই জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। আবার, মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রামেও কলাবউকে মা দুর্গাজ্ঞানে পুজো করা হয়। এই গ্রামে পূজিতা হন মা সিংহবাহিনী। তাই এখানেও আলাদা করে মাটির দুর্গাপ্রতিমার পুজো হয় না। প্রতিমা দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেও নতুন জামা-কাপড় পড়ে পুজোর ক’টা দিন কলাবউ পুজোকে ঘিরেই শারদীয়ার আনন্দে মাতেন গ্রামবাসীরা।

    মন্দিরের পূজারী বরুণ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা যোগাদ্যা। তিনিই তো মহিষাসুরমর্দিনী দশভুজা। তাই গ্রামে কোনও মাটির দুর্গা প্রতিমার পুজো হয় না। আমরা কলাবউকেই দুর্গাজ্ঞানে পুজো করি। চারদিন ধরে যোগাদ্যা মায়ের মন্দিরেই কলাবউ পুজো করা হয়। পাশের ইট্টা গ্রামেও একই নিয়ম রয়েছে। তবে ক্ষীরগ্রামে আরও কয়েকটি বাড়িতে কলাবউ পুজো করা হয়। সপ্তমীর দিন গ্রামের সমস্ত কলাবউকে মা যোগাদ্যার মন্দির চত্বরে আনা হয়। তারপর একসঙ্গেই ঘট ভরতে যাওয়া হয়। নবমীর দিন মা যোগাদ্যার মন্দিরে মহিষ বলি দেওয়ার রীতি আছে। এই প্রথা পুরনো আমল থেকে চলে আসছে।

    দুর্গাপুজোয় গ্রামগুলিতে মণ্ডপ করে থিম-আলোর রোশনাই না থাকলেও শারদীয়ার আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হন না। কলাবউ পুজোর চারদিন ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্রামবাসীদের মাতিয়ে রাখেন পুজো উদ্যোক্তারা।
  • Link to this news (বর্তমান)