• কাঁকসার দোমড়া শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের পুজোয় শামিল হন বাসিন্দারা, দশমীর পরিবর্তে ত্রয়োদশীতে হয় বিসর্জন
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুদীপ পাল  মানকর

    বেলুড় মঠের নিয়ম মেনে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে কাঁকসার দোমড়া শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রম ও সেবাশ্রম বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। সাতদিন ধরে চলে পুজো। দশমীতে নয়, বিসর্জন হয় ত্রয়োদশীতে। গ্রামে আর কোনও দুর্গাপুজো হয় না। তাই আশ্রমের পুজো হলেও স্থানীয়রা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোয় অংশ নেন। পুজোর জোগাড় থেকে প্রসাদ বিলি সবেতেই এগিয়ে আসেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা ছাড়াও কাঁকসা ব্লক, দুর্গাপুর মহকুমা এমনকী, ভিনজেলা থেকেও আসেন দর্শনার্থীরা। ভক্তদের জন্য থাকে প্রসাদের ব্যবস্থা। 

    আশ্রম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৬ সালে দোমড়ায় এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন স্বামী কৃপানন্দ মহারাজ। আশ্রমের প্রতিষ্ঠার সময় দুর্গাপুজো চালু ছিল না। স্থানীয় মানুষের দাবিতে ১০ বছর পর ১৯৬৫ সাল থেকে এখানে দুর্গাপুজো শুরু হয়। বর্তমানে আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মানন্দ মহারাজ। তিনি বলেন, বেলুড় মঠের ভাবপ্রচারের অন্তর্ভুক্ত আমাদের আশ্রম। বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোর নিয়ম মেনেই এখানে পুজো হয়। গ্রামের মানুষ মিলিতভাবে শোভাযাত্রা করে নিকটবর্তী সায়ের দিঘি থেকে সপ্তমীতে দোলায় করে ঘট ও নবপত্রিকা আনেন। বহু মানুষ এই শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় করে। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো হয়। একজন অল্পবয়সি ব্রাহ্মণ কন্যাকে শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে কুমারী হিসেবে পুজো করা হয়। আত্মানন্দজি জানান, কুমারী হওয়ার ক্ষেত্রে বেলুড় মঠ নির্দেশিত নিয়ম অনুসরণ করা হয়।

    কীভাবে কুমারী নির্বাচিত হয়? পুজোয় কুমারী হওয়ার জন্য অনেক আবেদন আসে। পরে সেখান থেকে নির্বাচিত করা হয়। তবে, এক্ষেত্রেও বিভিন্ন নিয়ম আছে। অষ্টমীর দিন আশ্রমে পুজো দেখতে বহু মানুষের সমাগম হয়। এখানে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। 

    বেলুড় মঠের রীতি মেনে পুজো হলেও এখানে প্রতিমা নিরঞ্জনের আলাদা ধারা আছে। প্রায় প্রথম থেকেই এখানে দশমীর বদলে ত্রয়োদশীতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। কথিত আছে, তৎকালীন সময়ে স্থানীয় পিয়ারিগঞ্জ এলাকার দুর্গা প্রতিমা দশমীতে বিসর্জনের সময় দোমড়া পর্যন্ত শোভাযাত্রা করে আনা হতো। দোমড়ায় লাঠি খেলা হতো। তা দেখতে ভিড় করতেন এলাকার বাসিন্দারা। একই দিনে দুই প্রতিমার বিসর্জন না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দোমড়ায় ত্রয়োদশীতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হবে। সেই রীতি এখনও চলছে। বিসর্জনের দিন আতশ বাজি পোড়ানো হয়। আশ্রম পার্শ্ববর্তী এলাকায় মেলা বসে। 

    আশ্রমের পক্ষে নির্মলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের প্রতিমা একচালার। দেবী এখানে ডাকের সাজে সজ্জিতা। আশ্রমের স্থায়ী মন্দিরে দেবীর পুজো হয়। 

    তিনি জানান, আশ্রম চত্বরেই রয়েছে সেবাশ্রম বিদ্যাপীঠ। এখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। এই স্কুলে ৭৫টির বেশি গ্রাম থেকে পড়ুয়ারা আসে। তাদের পরিবারের লোকজন, গ্রাম ও ব্লকের প্রচুর মানুষ এখানে যোগদান করেন। পুজোর সময় ভক্তদের জন্য বসে প্রসাদ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। মূলত ভক্তদের অনুদানেই সব আয়োজন হয়। 

    স্থানীয় বাসিন্দা সমীরণ লাহা, করুণাময় বাসুরি বলেন, পুজো উপলক্ষ্যে ভক্তদের চিঠি দিয়ে আগে থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়। দশমীর পরিবর্তে ত্রয়োদশীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের রীতি চালু থাকায় একটানা সাতদিন ধরে এখানে পুজোর রেশ থাকে। গোটা ব্লকের মধ্যে আশ্রমের পুজো খুবই জনপ্রিয়। এলাকার মানুষকে ঐতিহ্যবাহী এই দুর্গাপুজো একসূত্রে বেঁধে রেখেছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)