এই পুজোর বয়স পাঁচশো পেরিয়েছে।বড়জোড়া ব্লকের সাহারজোড়ায় একসময় জমি কর্ষণের সময় লাঙলের ফলায় উঠে এসেছিলেন দেবী মহামায়া। এখানে দেবীর কোনও চিন্ময়ী প্রতিমা নেই। পরিবর্তে একটি শিলাখণ্ডকে পুজো করা হয়।
কথিত আছে, বহু বছর আগে এক চাষি মাঠে লাঙল দিচ্ছিলেন। সেইসময় একটি প্রস্তরখণ্ড মাটি ভেদ করে উঠে আসে। লাঙলের ফলার ঘায়ে পাথরের গা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। তা দেখে ওই চাষি অবাক হয়ে যান। তিনি বিষয়টি গ্রামের বাসিন্দাদের জানান। ওই রাতেই স্থানীয় রাজা স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকেইগ্রামে মহামায়ার পুজো শুরু হয়। এখনও ওই পাষাণ দেবীর পুজো চলছে। মাঝে বাসিন্দারা গ্রামে একটি বারোয়ারি পুজো শুরুর চেষ্টা করেন। তবে তাতে নানাভাবে বিঘ্ন ঘটে। দেবী মহামায়ার মন্দির তখন তিনদিন ধরে বন্ধ ছিল। কিছুতেই দরজা খোলা যায়নি। দেবী মহামায়া থাকতে গ্রামে আর অন্য কোনও দুর্গাপুজো করা যাবে না বলেই অনেকের বিশ্বাস। ফলে তারপর থেকে আর কেউ নতুন করে কোনও পুজো শুরুর চেষ্টা করেননি বড়জোড়ার সাহারজোরায়।
দেবী মহামায়ার সেবাইত নিতাই রায় বলেন, একসময় বড়জোড়া এলাকা মল্লরাজাদের অধীনে ছিল। সেই সময় আমাদের এলাকা সুরভূম নামে পরিচিত ছিল। সুর রাজা বা জমিদার সুরথ বাউরি এলাকায় রাজত্ব করতেন। চাষির লাঙলের ফলায় দেবী উঠে আসার রাতেই রাজা স্বপ্নাদেশ পান। তারপর রাজা পুজো শুরু করেন। শোনা যায়, একবার এক শাঁখারী গ্রামে শাঁখা বিক্রি করতে আসেন। গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা পরেন। মহামায়া মন্দিরের পুরোহিতের মেয়ে হিসাবে তিনি নিজেকে পরিচয় দিয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য শাঁখারীকে বলেন। কিন্তু ওই পুরোহিতের কোনও মেয়েই ছিল না। পরে পুকুর পাড়ে গিয়েও কাউকে দেখা যায়নি। মনে করা হয়, দেবী মহামায়া বালিকা বধূর রূপ ধারণ করে শাঁখা পরেগিয়েছিলেন।
নিতাইবাবু আরও বলেন, বারোমাস দেবীর নিত্য পুজো হয়। দুর্গাপুজোর চারদিন আচার মেনেই হয় পুজোপাঠ। দেবীর পুজো হয় শাক্ত মতে। একসময় মন্দিরে মোষ বলি হতো। তবে বর্তমানে তা হয় না। এখন ছাগ বলি হয়। ঘুটগোড়িয়া এলাকা থেকে একজন এসে বলিদান করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন রায় বলেন, বর্তমানে গ্রাম ষোলোআনার তরফে দেবীর পুজো চালানো হয়।