মিশরীয় সৌন্দর্য থেকে অকাল বোধন, থিম উন্মাদনায় ফুটছে তমলুক
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা তমলুক
কোথাও এক টুকরো মিশর আবার কোথাও রামায়নের অকাল বোধনের কাহিনী। দর্শনার্থীর স্রোত টানতে কারও বাজি পুতুলের দেশ, কেউবা বেছে নিয়েছেন নেপালের জনক রাজার মন্দির। বিগ বাজেটের বেশিরভাগ পুজো কমিটিগুলি দর্শনার্থী টানতে নানান থিমে ঝুঁকেছেন। পুজো উদ্যোক্তারা রাতদিন কাজ করে চলছেন। গোটা শহর এখন আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠার অপেক্ষায়। আজ, দেবীপক্ষের সূচনা থেকেই সেই উন্মাদনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
তমলুক শহরের বিগ বাজেটের পুজোর মধ্যে অন্যতম তমলুক শহরের ১১নম্বর ওয়ার্ডে পদুমবসানের ইয়ুথ স্পোটিং ক্লাবের পুজো। এবার এখানকার পুজো ৩২বছরে পড়ল। থিমের নাম ‘মিশরীয় সৌন্দর্য’। বাজেট প্রায় ২০লক্ষ টাকা। ক্লাব সভাপতি তথা কাউন্সিলার গৌতম পাল বলেন, মিশরবাসীর একটি ফেস্টিভ্যালের বিশেষ সাজ আমাদের পুজোর থিমে উঠে আসছে। মণ্ডপশিল্পীরা নিখুঁত শিল্প ভাবনায় থিম ফুটিয়ে তুলছেন। পঞ্চমীর দিন আমাদের পুজোর উদ্বোধন হবে।
শহরের বিগ বাজেটের পুজোর মধ্যে অন্যতম নিউ ব্রাইট স্টারের দুর্গাপুজো। তমলুক শালগেছিয়ার ওই ক্লাবের পুজো এবার ৪৩বছরে পড়ল। রাজস্থানের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। বাজেট প্রায় ১৫লক্ষ টাকা। শালগেছিয়ার আর একটি বিগ বাজেটের পুজো তাম্রলিপ্ত সেবক সঙ্ঘের থিম অকাল বোধন। রামায়নের কাহিনীকে মণ্ডপে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। সমাজের বুকে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে বর্তমান সময়েও এরকম কর্মযজ্ঞের প্রয়োজনীতাকে রূপক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এবার ওই ক্লাবের পুজো ১০বছরে পড়ল। ক্লাবের কালচারার সেক্রেটারি রাজর্ষি সামন্ত বলেন, আমাদের বাজেট প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।
তমলুক শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে চককামিনায় একান্তে ক্লাবের দুর্গাপুজো এবার ৩৪ বছরে পড়ল। দেবী দশভূজার আগমন উপলক্ষ্যে গ্রামবাংলার খুশির চিত্র এখানকার মণ্ডপে তুলে ধরছেন শিল্পী। চককামিনা প্রাইমারি স্কুল মাঠে তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ক্লাব সভাপতি তথা পুরসভার কাউন্সিলার কানাইলাল দাস বলেন, বাজেট প্রায় ১০লক্ষ টাকা। সাতদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
শহরের চলন্তিকা মোড়ে অলস্টার ক্লাবের পুজোর থিম জনকরাজার মন্দির। নেপালের ওই বিখ্যাত মন্দিরের আদলে ক্লাব প্রাঙ্গণে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানে নেপাল অশান্ত হয়ে ওঠে। জনরোষ আছড়ে পড়েছে দেশের নানা মন্দিরেও। যদিও শান্তির বার্তা দিয়ে তমলুকের ওই পুজো কমিটি এবার নেপালের মন্দিরের আদলে সুসজ্জিত মণ্ডপ তৈরি করছে। এখানকার পুজো ৫৭বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় ১৫লক্ষ টাকা।
তমলুক শহরের দে পাড়ার নটিবয় ক্লাবের থিম পুতুলের দেশ। গোটা মণ্ডপজুড়ে সাজানো থাকবে পুতুল। শিশুবান্ধব এই মণ্ডপ বেশ দর্শনীয় হয়ে উঠবে। শৈশবের সঙ্গে পুতুলের চিরাচরিত সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে মোবাইল। বর্তমান শৈশব মোবাইলে আকৃষ্ট হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পুতুলের গুরুত্ব। এই বার্তা তুলে ধরতেই নটিবয় ক্লাবের এমন ভাবনা। এখানকার পুজো ৫৪বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় ১২লক্ষ টাকা।
তমলুক শহরে হাসপাতাল মোড়ে ওয়ান হার্টেড ক্লাব তিন হাজার গামছা দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছে। নদীয়ার শান্তিপুর থেকে ওই সংখ্যক গামছা আনা হয়েছে। যামিনী রায়ের চিত্রকলার অনুকরণে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। পুজো কমিটির সম্পাদক নন্দদুলাল ভৌমিক বলেন, এবার আমাদের পুজো ৪৬বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় ১২লক্ষ টাকা।
হাসপাতাল মোড়ে ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন এবার সাবেকি মণ্ডপ তৈরি করছেন। সুউচ্চ ওই মণ্ডপের সঙ্গে মানানসই প্রতিমা বেশ নজর কাড়বে বলে সংগঠনের কর্মকর্তাদের আশা।