নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: কালের নিয়মে সময় বদলেছে। অজয়ের বুক দিয়ে বহু জল প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের কোটা গ্রামের রায়বাড়ির দুর্গাপুজোর রীতিতে আজও কোনও পরিবর্তন হয়নি। রায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় এক সাধুর আদেশে প্রায় ২০০বছর আগে তৎকালীন জমিদার সূর্যকুমার রায়ের হাত ধরে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। রায়বাড়ির এই পুজোয় দশভুজা সিংহবাহিনী নন। উমার আগমন হয় বাঘের পিঠে চেপে। প্রতিমা হয় একচালার। শতাব্দীপ্রাচীন রীতি মেনে এখনও সপ্তমীর দিন অজয় নদ থেকে দোলা নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে পুজোর শেষে দশমী তিথিতে অজয় নদেই দোলা বিসর্জন হয়। এই বাড়ির প্রতিমা সন্ধ্যার আগে বিসর্জন হয় না। এছাড়াও প্রতিমা নিরঞ্জন পর্বেও রয়েছে অভিন্ন এক রীতি। প্রতিমা নিরঞ্জন শেষে বিসর্জন ঘাট ছেড়ে অজয় নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে কাঁচা হলুদ খেয়ে জলপানের নিয়ম রয়েছে।
প্রায় চার পুরুষ আগের কথা। স্থানীয় এক সাধু তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা জমিদার সূর্যকুমার রায়ের কানে তুলেছিলেন। এরপর ওই সাধুর আদেশেই জমিদারের একান্ত উদ্যোগে ১৮৩০সালে রায়বাড়িতে প্রথম দুর্গাপুজো হয়। এরপর থেকে বংশ পরম্পরায় আজও পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে। মূল দায়িত্ব রায় পরিবারের কাঁধে থাকলেও শরিকের সংখ্যা অবশ্য বেড়েছে। সেইসঙ্গে মন্দিরের আদলেও পরিবর্তন এসেছে। একসময় টিনের ছাউনি দেওয়া মন্দিরে দশভুজার আরাধনা চলত। বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বিশালাকার কংক্রিটের মন্দির। তবে, প্রতিমায় কোনও বদল আসেনি। আজও একচালা প্রতিমা গড়েই পুজো হয়। রায়বাড়ির এই পুজোকে কেন্দ্র করে কোটা গ্রামের রায়পাড়ায় নবমীতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রান্না বন্ধ থাকে। কারণ, সেদিন রায়বাড়িতে সকলকে পাত পেড়ে প্রসাদ খাওয়ানো হয়।
রায়বাড়ির শতাব্দীপ্রাচীন পুজোয় আজও বলি প্রথা চালু রয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোর একাধিক নিয়মের মধ্যে অন্যতম হল দোলা বিসর্জনের আগে হাতে নীল অপরাজিতা বাঁধা। প্রাচীন একাধিক এমনই রীতিতে রায়বাড়ির পুজো আজ সর্বজনবিদিত হয়ে উঠেছে। রায় পরিবারের সদস্য শান্তিময় রায় বলেন, প্রায় চার পুরুষ আগে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। বংশ পরম্পরায় শতাব্দী প্রাচীন রীতি মেনেই আজও পুজোর আয়োজন হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা একসঙ্গে এই পুজোয় মেতে উঠেন। ইতিমধ্যে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। হাতে খুব একটা সময় নেই। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হবে।