• মহালয়ার ভোরে জাগলো জেন জি, কাল থেকেই শুরু বর্ধমানের পুজো
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: পিতৃপক্ষের অবসানে আজ শুরু হল দেবীপক্ষ। দামোদর, ভাগীরথীর ঘাটে তর্পণ সেরেই পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দারা দুর্গোৎসবে মাততে চলেছেন। অন্যান্য জায়গায় পুজো শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে। আর বর্ধমানে কাল, প্রতিপদ থেকেই শুরু হচ্ছে দুর্গোৎসব। একসময় রাজাদের জেলা বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা। প্রতিপদের সকালে কৃষ্ণসায়র থেকে ঘটে জল ভরে মন্দিরে আনা হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন হয় প্রতি বছর। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা এই বিশেষ মুহূর্তে হাজির থাকবেন। ন’দিন ধরে মন্দিরে বিশেষ পুজো চলবে। নবমীর দিন হবে কুমারী পুজো। মন্দিরের পুরোহিত অরুণ ভট্টাচার্য বলেন, এটাই এখানকার প্রাচীন প্রথা। বহুদিন ধরেই এই রেওয়াজ চলে আসছে। আগামী দিনেও চলবে।

    বর্ধমানের রাজপরিবারের পটেশ্বরীর পুজোও শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। এই পুজোও বহু পুরনো রীতি মেনে চলে আসছে। তবে পুজোর সেই আগের জৌলুস নেই। বর্ধমানের আরও কয়েকটি পুরনো পুজো প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে যায়। জেলার বাসিন্দারা বলেন, এখন শহরগুলিতে থিমের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে বর্ধমান শহরের পুজো কমিটিগুলি আলোর রোশনাই আর থিমের বহরে নজর কাড়ে। কিন্তু তারপরও প্রাচীন পুজোগুলির জনপ্রিয়তা কমেনি। জেন জি-ও মন্দিরে এসে মাথা ঠেকান। একইভাবে মহালয়ার সকালের গুরুত্বও তাঁদের কাছে অন্য রকম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিব্যেন্দু দাস বলেন, নতুন প্রজন্ম আধুনিক। কিন্তু তারাও পুরনো প্রথা মেনে চলে। ২০ বছর আগেও বাঙালি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ শোনার জন্য ভোরে উঠত। নতুন প্রজন্মও সেটা করছে। এই ধারা আগামী দিনেও বজায় থাকবে। শহরের বাসিন্দা অনুপম দাস বলেন, মহালয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি। এদিন থেকেই আমাদের কাছে পুজো শুরু হয়ে যায়। অন্ধকার থাকতে থাকতেই দামোদরের পাড়ে হাজির হই। কাশফুলের বনের মাঝে সকালটা কাটিয়ে বাড়ি ফিরি। আমাদের কাছে পুজো ন’দিনের। প্রতিপদ থেকেই শহরের পুজো শুরু হয়। ওইদিন কৃষ্ণসায়রে যেতে না পারলে মন খারাপ হয়। বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার বলেন, বর্ধমানবাসীদের কাছে দুর্গোৎসব ন’দিনের। আমরা সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি। সর্বমঙ্গলা মায়ের ঘট ভরা মানেই পুজো শুরু হয়ে গেল। শহরজুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। সেটা এখনও রয়ে গিয়েছে।

    প্রবীণরা বলছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বহু পুরনো মন্দির রয়েছে। সেগুলি প্রায় ৪০০-৫০০ বছরের পুরনো। প্রতিটি পুজোর আলাদা বৈশিষ্ট্য। তবে মায়ের মাহাত্ম্য‌ সব জায়গায় একই। জেলার জঙ্গলমহল হিসেবে পরিচিত আউশগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাতেও বহু বছর ধরে মায়ের পুজো জাঁকজমকভাবে হয়ে আসছে। কালনা, কাটোয়া শহরেও অনেকগুলি প্রাচীন পুজো হয়। মন্দিরগুলিতে প্রতিপদ থেকেই আগমনির ঢাক বেজে ওঠে। তবে সর্বজনীন পুজো মণ্ডপগুলির উদ্বোধন তৃতীয়া বা চতুর্থীর সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে। শহর আলোকিত হয়ে উঠবে। কিন্তু তারপরও প্রাচীন মন্দিরগুলির প্রতি জেলার বাসিন্দাদের আকর্ষণ কমে না। মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাতে নতুন প্রজন্মও হাজির হয়ে যায়। তবে মায়ের কাছে মানত করার পাশাপাশি বিশেষ মুহূর্ত মোবাইল-বন্দি করতেও তারা ছাড়ে না। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)