• লীলা মজুমদারের সৃষ্টিতে সেজেছে কাশী বোস লেন
    বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুদীপ্ত সেন, কলকাতা: ‘সত্যি যে কোথায় শেষ হয়, স্বপ্ন যে কোথায় শুরু হয় বলা মুশকিল...।’ তা সত্ত্বেও ‘হলদে পাখির পালক’ বইতে হাত ধরাধরি করে চলেছিল স্বপ্ন ও সত্যি। সূক্ষ্মভাবে জীবনের বাস্তব ও সাহিত্যে কল্পনার জগতের রসায়ন তুলে ধরেছিলেন সাহিত্যিক লীলা মজুমদার। এবার তাঁকে, তাঁর সাহিত্যকে ঘিরেই সেজে উঠছে উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো সমিতির মণ্ডপ। বিষয়ভাবনা ‘পাকদণ্ডী’। কালজয়ী সাহিত্যিকের আত্মজীবনীমূলক সৃষ্টি। এর উপর ভিত্তি করেই মণ্ডপ ও মাতৃপ্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী অনির্বাণ। 

    বরাবরই ভিন্নধর্মী ভাবনাকে আধার করেই মাতৃআরাধনায় শামিল হয়েছে কাশী বোস লেন। গতবারের বিষয় ছিল নবজাগরণ, সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই। এবার ৮৮ বছরে শিশু-কিশোরসাহিত্যিক লীলা মজুমদারকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, লেখিকার জীবনের পাকদণ্ডী বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা আবিষ্কার করি এক সহজ সত্যির পথ। যার দু’পাশে একরাশ খুশির চিরসবুজ গালচে। সেই পথে হাত ধরাধরি করে হাঁটে স্বপ্ন আর সত্যি। খলবল করে চলেছে লখনা গাঁয়ের ছেলেপিলের দল। তারা জানে, লীলাবুড়ি গপ্পের টানে বড়লামার বেলুন ভাসতে ভাসতে গিয়ে ঠেকবে বাতাস বাড়িতে। তাপ্পর? দুনিয়ার আর কষ্ট, ঝগড়া থাকবে না। কেউ কাউকে বকবে না, চোখ রাঙাবে না। আঁক কষতে বলবে না। সাতের নামতা ধরবে না। শুধু থাকবে হাসি, খেলা, গান। শিশু সাহিত্য হলেও বড়রাও কেমন যেন একাত্ম হয়ে এই যায় লীলা-সাহিত্যের সঙ্গে। 

    কীভাবে সেজে উঠছে মণ্ডপ? লীলা মজুমদারের আশ্চর্য কল্পলোক ও অনবদ্য সৃষ্টিশীলতাকে তুলে ধরা হচ্ছে। চিত্রকলা-পারফর্মিং আর্টস মিলিয়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে তাঁর তৈরি অমরচরিত্ররা। শুধু মণ্ডপ বা ঠাকুরঘর নয়, সেজে উঠছে আশপাশও। লেখিকার বইয়ের রং-বেরঙের প্রচ্ছদে রেঙে উঠেছে পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলি। বড় বড় দেওয়াল-ক্যানভাসে ফুটে উঠছে ‘আর কোনোখানে’, ‘গুপীপানুর কীর্তিকলাপ’, ‘গোলু’, ‘মহাভারতের গল্প’রা। প্যান্ডেলের ভেতরে থাকা পাইনগাছ লেখিকার পাহাড়ি জীবনের স্মৃতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। লোহার কাঠামো ও অ্যাক্রলিক ট্রান্সপারেন্ট শিট দিয়ে তৈরি প্যান্ডেল দর্শকদের আমন্ত্রণ জানাবে লীলা মজুমদারের রঙিন, রসিকতায় ভরা, বাঙালিয়ানা মোড়া জগতে। ধাতুর তৈরি একাধিক রঙিন ঢাউস পাতায় সাদা অক্ষরে ফুটে উঠেছে তাঁর সৃষ্টি। তাছাড়া গল্প, উপন্যাস, কবিতা পড়ার সঙ্গে আরামকেদারার দীর্ঘ সম্পর্ক। তাই মণ্ডপ সজ্জাতেও অন্যতম অংশ হয়ে উঠেছে এই সামগ্রী। এইগুলি খুলবে-বন্ধও হবে। শিল্পী বলছিলেন, মূলত পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়েই সমগ্র ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেবী প্রতিমাতেও রয়েছে সাহিত্যের ছোঁয়া। আসলে লীলাদেবীর পুজোবার্ষিকীতে লিখতেন। তারই প্রচ্ছদের মতো করেই মাকে তৈরি করা হয়েছে। 

    ক্লাব কর্তা সোমেন দত্ত বলেন, সাহিত্যিক লীলা মজুমদারকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানাতেই এই উদ্যোগ। এই সময়ে শিশুরা যাতে তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে পারে, আকৃষ্ট হতে পারে, সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। পাশাপাশি, আমাদের মতো যাঁরা লীলাদেবীর সাহিত্য পড়ে বড় হয়েছেন, তাঁরাও পুরনো দিনগুলিকে ফিরে পেতে পারবেন। স্মৃতি জীবন্ত করতে থাকবে বিভিন্ন চরিত্রের লাইভ পারফরম্যান্সও। মণ্ডপের বাঁদিকে থাকছে বিরাট একটি শব্দছকও। যার একদিকে, লীলা মজুমদার। অন্যদিকে, তাঁর সৃষ্টি। লেখিকার সহজ, সরল চরিত্রেরাও উঁকিঝুঁকি দেবে মণ্ডপে। 
  • Link to this news (বর্তমান)