নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে কালীঘাটের পটচিত্র স্থান সেই কোম্পানির আমল থেকেই দৃঢ়। সে আমলে ইংরেজদের একচেটিয়া দখলদারির মধ্যেই স্থায়ী জায়গা ছিল কালীঘাটের পটের। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের সামনের বাজার ধরে পটচিত্র কেনাবেচা হতো। তা এখন ইতিহাসের পাতায় মুখ লুকিয়েছে। সেই পাতায় যদিও টিমটিম করে হলেও উজ্জ্বল ভাস্কর চিত্রকর। কালীঘাটের পটুয়াপাড়ায় তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এখনও পটচিত্র আঁকেন। পটকে আধুনিকও করে তুলেছেন ভাস্কর। এককালে দেব-দেবীর ছবি থাকত। এখন ফুটে উঠছে সেলফি চিত্র। তবে পটের চাহিদা কমছে। তাই পেট চালানোর জন্য অন্যান্য কাজও করতে হয় ভাস্করকে। এখন পুজোর সময় ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে চিত্রকরের। তাঁর আঁকা পটচিত্রের দাম শুরু ১০ হাজার টাকা থেকে। বললেন, ‘এখন তো পটচিত্র কেউ করেন না। আমরা চার প্রজন্ম ধরে আঁকছি। আমি আমার বাবার কাছ থেকেই এই বিশেষ পদ্ধতি শিখেছি।’
তাঁর অবর্তমানে আগামী দিনে পটচিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে? কে লহিবে সে কার্য? বাংলার নিজস্ব একটি শিল্পকলা কি উধাও হয়ে যাবে? ভাস্করবাবুর বক্তব্য, ‘আমি অন্তত কাউকে আর শেখাইনি। এখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খুব একটা উত্সাহও দেখি না। কী আর করা যাবে? আমরা তো প্রথমে শুধু পটচিত্রই করতাম। তারপর ধীরে মানুষের চাহিদা বদলাতে থাকল। ঠাকুরের প্রতিমার দিকে মানুষের ঝোঁক বাড়তে থাকল। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরাও পট থেকে সরে এলাম।’ কিন্তু তবুও পট আঁকা ছেড়ে দেননি ভাস্কর। যখন যেরকম অর্ডার আসে সেরকমই কাজকর্ম করেন। তাঁর পটচিত্রে দেখা যায়, আধুনিকতার ছোঁয়া। এককালে শিব-কালী-রাম-সীতা এইসবই পটের বিষয়বস্তু হিসেবে দেখা যেত। কিন্তু আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাবু-বিবির সেলফি তোলার পটচিত্রও ফুটে ওঠে ভাস্করবাবুর কাজে। এখন পেট চালানোর জন্য কখনও মূর্তি তৈরির কখনও কেটারিংয়ের কাজে যুক্ত ভাস্করবাবু।
ইতিহাসবিদরা বলেন, একটা সময় কালীঘাটের এই পটচিত্র বাংলা সহ সারা পৃথিবীর তাবড় চিত্রশিল্পীদের প্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু কালের নিয়মে আজ কালীঘাট চত্বরে প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না পটশিল্পীদের। পরপর বেশ অনেকগুলো ঠাকুর তৈরির ডেরা। কাউকে পটশিল্পী নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই সকলে দেখিয়ে দেন ভাস্করবাবুর আস্তানা। সেখানে এক মনে পট এঁকে যান এই একমাত্র পটশিল্পী।