৩০০ বছরেরও প্রাচীন দুর্গাপুজো, দর্পণে চরণ দর্শনের রীতি
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সুকান্ত বসু, কলকাতা: অধিকাংশ জায়গায় দশমীর পর দর্পণে দুর্গার মুখ দেখার রীতি। কাশীপুর বিশ্বাস বাড়িতে ঠিক উল্টো নিয়ম। এখানে দেবীর চরণ দর্শন করা হয়।
উত্তর কলকাতার কাশীপুরে রতনবাবু রোডে অবস্থিত বিশ্বাস বাড়ি। সেটি ‘নড়াইল হাউস’ নামেও পরিচিত। দুর্গাপুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। পুজো হয় তন্ত্রমতে। পুজোর তিনদিনই হয় পাঁঠা বলি। দুর্গাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। এরকম কিছু ব্যতিক্রমী নিয়ম মেনে হয় পুজো।
দশমীর পুজো সম্পন্ন হওয়ার পর বাড়ির সকলে বড় একটি কাঁসার গামলায় জলের দর্পণে ফুটে ওঠা দুর্গার পায়ের প্রতিবিম্ব দেখেন। সন্ধ্যায় মন্দির চত্বরে সিঁদুর খেলা। দুর্গা ও চণ্ডীমণ্ডপ পরিক্রমা শেষে রতনবাবু ঘাটে হয় নিরঞ্জন। আর মূল দর্শনীয় বিষয়টি হল নাড়ু। অজস্র নাড়ু ভোগ হিসেবে দুর্গাকে নিবেদন করে বিশ্বাসরা। নারকেল, তিল, বোঁদে, মিহিদানা, চিনি, গুড় ইত্যাদি দিয়ে কয়েক হাজার নাড়ু তৈরি হয়। বিষয়টি এমনই এলাহি যে, নাড়ু তৈরির জন্য একটি বিশেষ ঘর রয়েছে। সেটির নাম ‘নাড়ুর ঘর’।
চোখ ধাঁধানো স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে মোড়া বিশ্বাস বাড়ি। এরকম সদর দরজা উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য। মূল দরজার গায়ে লাগানো রয়েছে পুরসভার দেওয়া ‘হেরিটেজ’ বোর্ড। এই পথ দিয়ে ঢুকে প্রাচীন মূল বাড়ির দিকে হাঁটলে চোখ অবাক হয়। বাংলাদেশের ফরিদপুরে শুরু হয়েছিল এই পরিবারের পুজো। পরবর্তীকালে পুজো চলে আসে কাশীপুরে। হয় বাড়ির দুর্গামণ্ডপেই। দু’টি মন্দির আছে। একটি চণ্ডীর। অন্যটি শিবের। পরিবারের সদস্য মন্দিরাদেবী ও পল্লবীদেবী জানালেন, রথ অথবা জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয়। শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা একচালার নয়। তবে আদল সাবেকি। আগে পূর্ববঙ্গের গোপালগঞ্জ থেকে আসতেন মৃৎশিল্পী। এখন স্থানীয় শিল্পী মূর্তি গড়েন। পুজোয় আচার, অনুষ্ঠান পুরনো রীতিনীতি মেনেই হয়। নিয়মের একচুলও এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। অজস্র ফল, নানা ধরনের মিষ্টি, নাড়ু, নিমকি ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় দুর্গাকে। এখনও কলকাতা ও শহরতলির বহু মানুষ বিশ্বাস বাড়ি আসেন প্রতিমা দর্শনে। এ বাড়িতে এসেছেন বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্ল সেন প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করতে এসেছিলেন রামকুমার চট্টোপাধ্যায় সহ অনেকে। পরিবারের সদস্য দোলনচাঁপা (কল্পনা) বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সকলে মিলে এই বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য টিঁকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। বহু ইতিহাসের সাক্ষী আমাদের বাড়ির দুর্গোৎসব।’