পুতুল থেকে রোবট, প্রযুক্তির টাইম মেশিনে উঠেছে হরিদেবপুর ৪১ পল্লি
বর্তমান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্বার্ণিক দাস কলকাতা
হরেকরকম খেলা। আর ছোট থেকে শুরু করে বড় বড় পুতুল। কোনওটি উপর থেকে ঝুলছে। কোনওটি বসে আছে। মণ্ডপের ভিতর প্রবেশ করলে শিশুদের মহা আনন্দ। আর বড়রা নস্টালজিয়ায় ভুগতে বাধ্য। পিছিয়ে যাওয়া ৭০-৮০ বছর আগে। তখন ছোটবেলা আনন্দে মাতত পুতুল খেলায়। সেসব এখন অতীত। টাইম মেশিনের সুইচ টিপলেই বর্তমান যুগে পা। যন্ত্রের পুতুল—রোবটই ভবিষ্যত। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আগুন নেভানো থেকে শুরু করে জীবনদায়ী অস্ত্রোপচার-সবটাই প্রযুক্তির কাঁধে ভর করে যন্ত্রের কেরামতি। এবছর ৬৮ বছরে পা দিল হরিদেবপুর ৪১ পল্লি। দুর্গার আগমন উদযাপনে উদ্যোক্তাদের এবারের উপস্থাপনা ‘সোপান’। দর্শনার্থীদের টাইম মেশিন বসিয়ে দুই প্রজন্মের ছবি তুলে ধরবেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। হাতে চালানো কাঠপুতুল আর মেশিনচালিত রোবটের যোগসূত্র ৪১ পল্লি ক্লাব প্রাঙ্গণে। হঠাৎ দুই প্রজন্মকে একসূত্রে গাঁথা কেন? শিল্পীর ভাবনায়—প্রযুক্তি ও মেশিনের ব্যবহার বর্তমান যুগের নিরিখে অনস্বীকার্য। সে কালের পুতুলকেই মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্যে রোবট করে তুলেছে। বিজ্ঞানীদের কর্মকাণ্ডের বলেই আজ রোবট রোগীদের অস্ত্রোপচার করতেও সক্ষম। বিদেশের ধাঁচে দেশের মাটিতেও আজ বড় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যবহার হয় রোবট। বিজ্ঞানের এই উত্থান ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। দর্শকদের নজরে আসবে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার একটি রোবট। তবে তা খেলনা রোবটের মতো নয়। আকার দেওয়া হয়েছে অনেকটা পুতুলের মতো। কিন্তু তা মেশিনচালিত। ক্লাব সম্পাদক সুরজিৎ রায়ের কথায়, মাতৃপ্রতিমার সঙ্গে আমরা কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা করিনি। মাতৃমুখ একদম প্রথাগত ধাঁচেই করা হয়েছে। দর্শকরাই আমাদের প্রধান ইউএসপি। আমরা চাই তাঁরা টাইম মেশিনে চড়ে নিজেদের আনন্দ ভাগ করে নিন।’
হরিদেবপুর ৪১ পল্লি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অজেয় সংহতি। দুই পুজো কমিটির মধ্যে দর্শক টানার লড়াই প্রতিবছরের। একদিকে যখন টাইম মেশিনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে তুলে ধরছেন উদ্যোক্তারা, তখন নারীশ্রমকে আঙ্গিক করে দর্শক টানতে প্রস্তুত হরিদেবপুরের নামজাদা পুজো কমিটি অজেয় সংহতি। এখানে কর্মরত মহিলাদের সম্মান জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তার ভিত্তি হল অসাধারণ কারুকার্যের মণ্ডপসজ্জা। প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে তৈরি হয়েছে প্যান্ডেল। এরপর তার উপর খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারী রূপ। কেউ কৃষিকাজে ব্যস্ত, কেউ রাজমিস্ত্রি। আবার কেউ ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, অথবা বিজ্ঞানী। বিভিন্ন পেশাতেই লুকিয়ে রয়েছেন রক্তমাংসের দুর্গারা। সহ শিল্পীর গৌরব বলেন, ‘শক্তির দেবী দুর্গা। তাঁর ধুমধাম করে পুজো করি। কিন্তু ভুলে যাই কর্মরত মা, বোন, দিদি, স্ত্রী’দের ত্যাগ। তাঁরাই বাস্তবের দুর্গা। তাই পুজোর আবহে নারীশ্রমকে কুর্নিশ জানাতেই আমাদের এই ভাবনা।’ বিভিন্ন রঙের ব্যবহার করা হয়েছে মণ্ডপে। গ্রাম্য চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সবুজ রঙের ব্যবহার বেশি। শহরের ক্ষেত্রে নানা রঙের সমাহার। সবমিলিয়ে অজেয় সংহতিও তাল ঠুকছে দর্শককুলের ভিড়কে স্বাগত জানাতে।