অলকাভ নিয়োগী , বিধাননগর: ‘বিবেকানন্দ, গান্ধীজি, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি আমাদের একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন। যেদিন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব না সেদিন দেশ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আমরা চাই, সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকুক। একসঙ্গে থাকুন। দেশ ভালো থাকুক।’ শনিবার শ্রীভূমি পুজো মণ্ডপের সূচনা অনুষ্ঠানে এসে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপের সূচনার পর আসেন শ্রীভূমিতে।
শরতের নীল আকাশ বারবার ঢেকে দিচ্ছে অসুর মেঘ। দুশ্চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে উদ্যোক্তাদের কপালে। কিন্তু শ্রেষ্ঠ উৎসব, থিম, আলোর রোশনাইয়ে মাততে বাঙালিকে কি আটকে রাখা যায়! শনিবার বৃষ্টি থামার পর আবহাওয়া ছিল ঠান্ডা মনোরম। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎসবের সূচনা করলেন। তারপর শহরজুড়ে পুজোর আমেজ। আজ, রবিবার সন্ধ্যার পরই দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে শ্রীভূমির মণ্ডপ। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সূচনা পর্বেই ঐক্যের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, আজ, মহালয়ায় প্রকাশিত হবে তাঁর লেখা ১৭টি পুজোর গানের অ্যালবাম।
পুজোর সময় লেকটাউনের নাম বদলে হয়ে যায় শ্রীভূমি। এই মণ্ডপ না দেখলে যেন ঠাকুর দেখা সম্পূর্ণ হয় না। কলকাতার পুজোর ভিড়কে জনস্রোতে পরিণত করেছে এই পুজো। এ সময় রাস্তার যানজট ঠেকাতে সতর্ক থাকতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত কখনও মাহিষমতি সাম্রাজ্য, কখনও দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, কখনও ক্যালিফোর্নিয়ার ডিজনিল্যান্ড বানিয়ে চমক দিয়েছে শ্রীভূমি। গতবছর অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি বালাজি মন্দির হয়েছিল। এবছর পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়াই কলকাতায় বসে নিউ জার্সির স্বামী নারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির দেখার সুযোগ করে দিয়েছে তারা। বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ মন্দির থিম আকারে তুলে ধরা হয়েছে। কয়েক কিলোগ্রাম সোনার অলঙ্কারে সেজে উঠেছেন দুর্গা। তা দেখাও বাড়তি পাওনা।
শ্রীভূমিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহালয়ার দিন থেকে আমি মাতৃ প্রতিমার উদ্বোধন করি। তার আগে করি না। তাই আজ মণ্ডপের সূচনা করে গেলাম। পুজোর সময় আমরা সকলে মিলিত হই। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ধর্ম, নিজস্ব মত, নিজস্ব ভাষা রয়েছে। কেউ মা বলেন, কেউ আম্মা, কেউ বা মাদার। বৈচিত্র্যের মধ্যেই আমাদের ঐক্য। আমি মাতৃভাষাকে সম্মান করি। অন্যরাও নিজের ভাষাকে সম্মান করুন। কিন্তু বাংলায় কথা বললে অত্যাচার করব, এটা ঠিক নয়। বাংলার ২২ লক্ষ শ্রমিক যেমন বাইরে কাজ করেন, তেমনই বাইরের দেড় কোটি মানুষ কাজ করেন এই বাংলায়। এতে আমি খুশি।’ শ্রীভূমির কর্ণধার এবং রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘প্রায় দু’কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত পুজোর আলোকসজ্জা। চন্দননগরের আলোর তোরণগুলিতে বাংলার বিখ্যাত মন্দিরগুলি থিম আকারে তুলে ধরেছি। প্রাচীন কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে আছে মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরও। প্রতীক্ষার অবসান। আজ, রবিবার সন্ধ্যার পরই দর্শনার্থীরা শ্রীভূমিতে প্রবেশ করতে পারবেন।’