বাংলা সম্প্রীতির মাটি, দুর্গাপুজোর মণ্ডপ উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে ফের একবার সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহালয়ার প্রাক্কালে বাংলা-বাঙালি ইস্যুতেও সুর চড়িয়েছেন তিনি। শ্রীভূমির ‘উৎসব উৎসারিত’ অনুষ্ঠানে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক এবং ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচারের কথা বলতেও ভোলেননি তিনি।
শনিবার হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয় এবং শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শ্রীভূমি থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত বৈচিত্র্যময় দেশ। প্রত্যেকের ভাষা, মত, দর্শন, পোশাক, অভ্যেস আলাদা। তবে সমাজে এই প্রত্যেক পৃথক দিক একসঙ্গে মিশে যায়। জলকে কেউ পানি বা কেউ ওয়াটার বলতে পারে, কিন্তু তাতে বস্তুর পরিবর্তন হয় না। তাহলে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কেন বারংবার অত্যাচারিত হতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সংযোজন, ‘আমি সব ভাষাকে সম্মান করি। প্রত্যেকে নিজের মাতৃভাষাকে সম্মান করুক, সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলায় কথা বললেই অত্যাচার করা হবে, এটা হতে পারে না।’ এই প্রেক্ষিতেই পরিযায়ী শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, রাজ্যের শ্রমিকদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় কারণ তাঁরা দক্ষ, প্রতিভাবান। ২২ লক্ষ বাঙালি বাইরে কাজ করেন। রাজ্যের বাইরের দেড় কোটি মানুষ বাংলায় কর্মরত। তাঁরা তো পশ্চিমবঙ্গে শান্তিতে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘রামকৃষ্ণ থেকে মহাত্মা গান্ধী, আম্বেদকর থেকে বিবেকানন্দ আমাদের সম্প্রীতি শিখিয়েছেন। যেদিন আমরা একসঙ্গে থাকব না, দেশটা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।’
পুজো মণ্ডপে বাংলা গান বাজানোর উপর জোর দিয়েছেন মমতা। ভিনরাজ্যে বাংলা-বাঙালি অপমানের আবহে পুজো কমিটিগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী এহেন পরামর্শ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপ উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মহালয়াতে তাঁর ১৭টি গান আসছে। প্রত্যেক গানের মধ্য দিয়ে কিছু না কিছু বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। নচিকেতা, রাঘব, বাবুল সুপ্রিয়ো, ইন্দ্রনীল সেন, অদিতি মুন্সি, ইমনরা মিলে গানগুলি গেয়েছেন। আমজনতাকে তাঁর প্রত্যেকটা গান, সর্বোপরি বাংলা গান শোনার অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। টালা প্রত্যয়ের এবারের থিম ‘বীজ অঙ্গন’। এই নামকরণ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘ববির পুজোতে ঠাকুরের চোখ আঁকা এবং টালা প্রত্যয়ের থিম ভাবনা— এই দুটো আমার কাছে তাঁদের বরাবরের আবদার। জগন্নাথধামের উদ্বোধনের সময়ই আমাকে থিম ভাবতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’ বীজ অঙ্গন থিমের জন্য কৃষকদের সম্মান জানিয়ে মমতা একটি গানও রচনা করেছেন ‘ধন ধান্য’। মন্ত্রী তথা সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া এই গানটিতে মুখ্যমন্ত্রী ফুটিয়ে তুলেছেন কৃষকদের অবদানের কথা। মমতা জানিয়েছেন, কৃষকদের সম্মান জ্ঞাপন করে ‘বীজ অঙ্গন’ তৈরি হয়েছে। তাঁরা শস্য না ফলালে মানুষের জীবনধারণ সম্ভব নয়। ঠিক একই প্রসঙ্গ তুলে শ্রীভূমি থেকেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘কারিগররা বিভিন্ন জিনিস বানান, রাজমিস্ত্রীরা বাড়ি বানান।