• কুড়মি সমাজের রেল অবরোধ ভেস্তে গেলেও কোটশিলায় পাথর বৃষ্টি
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আগাম প্রস্তুতি, আদালতের নির্দেশ ও পুলিশের কড়া নজরদারির জেরে শনিবার সকাল পর্যন্ত আদিবাসী কুড়মি সমাজের ঘোষিত ‘রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচির প্রভাব পড়েনি পুরুলিয়ায়। জেলার রেললাইন থেকে সড়কপথ— সবই ছিল স্বাভাবিক। তবে দুপুর গড়াতেই পরিস্থিতি পাল্টে যায় কোটশিলায়। রেল অবরোধের চেষ্টা ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

    নজিরবিহীন নিরাপত্তা সত্ত্বেও বিকেলের দিকে কোটশিলা স্টেশনে জড়ো হন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। রেল ও রাজ্য পুলিশের বাধা পেয়ে শুরু হয় বচসা। মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। তাতে গুরুতর জখম হন কয়েকজন পুলিশ কর্মী। পাথরে আঘাত পান সংবাদমাধ্যমেরও একাধিক প্রতিনিধি। আহত পুলিশ ও সাংবাদিকদের রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

    পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানো গ্যাসের সেল ফাটায়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য। এদিকে জেলা পুলিশ প্রশাসনের দাবি, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অবরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল বলেই এই পদক্ষেপ।

    সকালে প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতি কার্যত ব্যর্থ করে দিয়েছিল কুড়মি সমাজের ঘোষিত কর্মসূচি। কুস্তাউর, ঝালদা, কোটশিলা ও পুরুলিয়া স্টেশন— কোথাও ট্রেন চলাচলে সমস্যা হয়নি। আরপিএফ ও রাজ্য পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যেই রাঁচি-পুরুলিয়া-হাওড়া বন্দে ভারত-সহ সব ট্রেন চলেছে নিয়মমাফিক। পুরুলিয়ার সড়ক যোগাযোগও ছিল স্বাভাবিক।

    তবে প্রভাব পড়েছে পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডে। সকাল থেকে রাজ্যের একাধিক জায়গায় রেল লাইন অবরোধের জেরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনে ৮টি ট্রেন বাতিল, ৮টি ট্রেন সংক্ষিপ্ত পথে চালানো এবং ৯টি ট্রেন ঘুরপথে চালাতে হয়েছে। ফলে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার কোটশিলা স্টেশনে আটকে যায় একাধিক ট্রেন। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

    কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিত প্রসাদ মাহাতোকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি তুলেছেন তাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ মাহাতো। অভিযোগ, তাঁর বাবা-সহ অন্তত ১৫ জন কর্মীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। যদিও জেলা পুলিশ এই দাবি অস্বীকার করেছে।

    পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ‘সাধারণ মানুষের সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কোনও অবস্থাতেই রেল ও রাস্তা অবরোধ করতে দেওয়া হবে না।’

    ফলে সব মিলিয়ে, পুরুলিয়ায় দিনের শুরুতে ব্যর্থ হলেও, শেষ পর্যন্ত কোটশিলায় পাথর বৃষ্টি ও পুলিশ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। আদালতের নির্দেশ ও প্রশাসনের প্রস্তুতি সত্ত্বেও কুড়মি আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)