পুজোর অনুদান নারী সুরক্ষা থেকে প্রচারে, বাস্তবায়ন নিয়ে থাকছে প্রশ্ন
আনন্দবাজার | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কেউ মহিলাদের সুরক্ষার কাজে পুজোর সরকারি অনুদানের টাকা খরচের পরিকল্পনা করেছেন। কেউ আবার পরিকল্পনা করেছেনসামাজিক সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচি করার। কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে ক্লাবের তরফে সারাবছর যে সমাজসেবামূলক কর্মসূচি করা হয়, সেখানে ব্যয় করবেন বলে জানাচ্ছেন। কেউ এখনই কোনও পরিকল্পনার কথাজানাতে না পারলেও আদালতের নির্দেশ মতোই সবটা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে, উদ্যোক্তাদের তরফে ‘নির্দেশ’ মানা হবে বলেদাবি করা হলেও কার্যক্ষেত্রে এই ‘পরিকল্পনা’র সবটাবাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
এ বছর দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান ৮৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক ধাক্কায় এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা করেছে রাজ্য সরকার। পুজোয় সরকারিঅনুদানের বিরোধিতা করে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। পুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা না দিলেও এক গুচ্ছ নিয়ম মানার কথা জানিয়েছে আদালত। সরকারি অনুদানের অর্থ যাতে প্রতিমা বা দশকর্মার জিনিস কেনা,ঢাকি বা পুরোহিতকে দক্ষিণা দেওয়ার মতো কাজে ব্যবহার করা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুজোরউদ্যোক্তাদের ওই টাকা সাধারণ মানুষের স্বার্থে কোনও সামাজিক কাজে ব্যবহার করতে বলাহয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যে সমস্ত পুজো কমিটি গত বছরের পুজোর অনুদানের খরচের হিসাব,অর্থাৎ ‘ইউটিলাইজ়েশনসার্টিফিকেট’ দেয়নি, তাদের অনুদান দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশও দিয়েছে হাই কোর্ট।
শহরের পুজো কমিটিগুলিকে ইতিমধ্যেই সরকারি অনুদানের এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনে শহরের অধিকাংশ পুজো কমিটি এই অনুদানের টাকা খরচের পরিকল্পনা সেরে ফেলেছে বলে দাবি। দক্ষিণ কলকাতার বড় বাজেটের পুজোগুলিরঅন্যতম সুরুচি সঙ্ঘের উদ্যোক্তা কিংশুক মিত্রের দাবি, সারা বছর ক্লাবের তরফে রক্তদান শিবির থেকেশুরু করে দুঃস্থ, মেধাবীদের সাহায্য, লোকজনকে হাসপাতালে ভর্তি, ওষুধ কিনে দেওয়ার মতোসামাজিক কাজ করা হয়। আদালতের নির্দেশেসেই খাতেই অনুদানের টাকা খরচ করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি অনুদান পাওয়ার আগে থেকে ক্লাবের তরফে একটি বড় অঙ্কশুধুমাত্র এই সব কাজের জন্যই রেখে দেওয়া হত।বছরের পর বছর এই ভাবেই চলে আসছে। পুজোয় পাওয়া সরকারি অনুদানেরটাকা সেই সমস্ত সামাজিক কাজেই ব্যবহার করব।’’
আদালতের নির্দেশ মেনে পরিকল্পনা করে ফেলেছে দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকমিটিও। ওই পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, ‘‘আমাদের পুজোয় মহিলাদের সুরক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়। যে সকল দর্শনার্থী মণ্ডপেআসেন, তাঁদের সুরক্ষার জন্য প্রচুর সংখ্যক মহিলা নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়। গত বছর ২ লক্ষ ৫৪হাজার টাকা এর জন্যই শুধু খরচ হয়েছিল। এ বছর অনুদানেরটাকা ওই খাতেই খরচকরা হবে।’’
পুজো কমিটির উদ্যোগে যে সামাজিক কাজ হয়, সরকারি অনুদানের টাকা সেখানেখরচের ভাবনা উত্তর কলকাতার গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির। তাদের দাবি, পুজো কমিটির তরফে বস্ত্রদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির এবং সারা বছর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া রোধে সচেতনতার প্রচার করাহয়। এ ছাড়া, রাজ্যের কোথাও কোনও দুর্যোগ হলে সেখানে যাতে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা থাকে। এই পুজোরযুগ্ম সম্পাদক মান্টা মিশ্রের কথায়, ‘‘পুজো মানে তো কয়েক দিনের উৎসব নয়। আমরা অন্তত সেইভাবে ভাবি না। সারা বছর কিছু না কিছু করতেই হয়। সেই খাতেইঅনুদানের টাকা খরচ হবে।’’
তবে, পুজোর অধিকাংশ উদ্যোক্তা নির্দেশ মেনে অনুদানের টাকা খরচের কথা বললেও বাস্তবে তা কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে। এমনকি, এই অনুদানের খরচে নজরদারি কে করবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। ফলে, এ ক্ষেত্রে গরমিল যে হবে না, সেই আশঙ্কাএকেবারে উড়িয়ে দিতে চাইছে না অভিজ্ঞ মহল। যদিও গরমিলের আশঙ্কার কথা মানতে চাননি হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তাতথা ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সহ-সভাপতি শাশ্বত বসু। তিনি বললেন,‘‘আদালত যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছে, সেই ভাবেই সরকারি অনুদানের টাকা খরচকরা হবে। সেই মতো প্রতিটি পুজো কমিটিকেও ফোরামেরপক্ষ থেকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’