সাত বছরের জন্মদিনে বাবা ‘বাদশাহি আংটি’ উপহার দেন। ওই বয়সে সুপারম্যান মনে হয়েছিল ফেলুদাকে। সত্যজিৎ রায়ের গুণ, একই গল্পে সব বয়সের পাঠককে ধরতে পারতেন। আশির দশকে পুজোবার্ষিকীতে রায় সাহেবের গল্প বেরত। সেটাও পড়তাম।
ফেলুদা হয়ে ওঠা তো স্বপ্ন ছিল?
আর অন্য কোনও চরিত্রের প্রতি আমার মোহ নেই। এটাই আমার একমাত্র স্বপ্ন ছিল। ঈশ্বর, দর্শক, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের (পরিচালক) কাছে কৃতজ্ঞ থাকব, এই সুযোগ আমাকে দেওয়ার জন্য।
সৃজিত আর ফেলুদা করতে চান না, সেই সিদ্ধান্ত কষ্ট দিয়েছিল?
আমার কেরিয়ারের সবথেকে খারাপ সময়ে ও স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আমাকে ফেলুদা হিসেবে কাস্ট করেছিল। খারাপ লেগেছিল। কারণ ও ছাড়া আমাকে কেউ ফেলুদা হিসেবে ভাবেননি।
সুযোগ তো আবারও এসেছে?
হ্যাঁ, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ফেলুদা করেছি। উনি একটা ক্লাসিক ফর্ম্যাট অনুযায়ী কাজ করেন। দুই পরিচালকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা দেখে আমি মুগ্ধ। রায় সাহেব যেভাবে লিখে গিয়েছেন, সেখান থেকে খুব একটা বেরিয়ে আসা যায় না। টেক্টটের প্রতি দুই পরিচালকই খুব সৎ।
আপনার কন্যা ফেলুদা হিসেবে বাবাকে কত নম্বর দিল?
আমার মেয়ে স্বল্পভাষী। এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বিশ্বের সব কাজ দেখে। ওদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া কঠিন। আমরা অল্পেতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। মেয়ে যখন বলল, ভালো লাগছে বাবা। তখন ভাবলাম ঠিকই আছে (হাসি)।
মনে রাখার মতো আর কোনও প্রতিক্রিয়া?
কয়েকবছর আগে লন্ডন ঘুরতে গিয়েছিলাম। ‘দার্জিলিং জমজমাট’ সেবার রিলিজ করেছিল। স্কটল্যান্ড নিবাসী এক বাঙালি দম্পতির সঙ্গে দেখা হয়। সঙ্গে ১৮-১৯ বছরের মেয়ে। দম্পতি বললেন, আমাদের মেয়ের জন্ম, পড়াশোনা স্কটল্যান্ডে। চেষ্টা করেও বাংলা শেখাতে পারিনি। আপনাদের সিরিজটা আমরা যখন দেখছিলাম, ও আমাদের সঙ্গে পুরোটা দেখে। সাবটাইটেল ছিল বলে ওর বুঝতে অসুবিধে হয়নি। তারপর বলেছিল, বাবা আমার মনে হয়, এবার বাংলা শেখা উচিত। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?
এটাই আপনার অভিনীত একমাত্র সমসাময়িক ফেলুদা?
হ্যাঁ, আমাদের করা একমাত্র মর্ডার্ন ফেলুদা এটাই। ২০১৫-র বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়ারের চেহারা একেবারে বদলে গিয়েছে। যা রায়সাহেব লিখে গিয়েছিলেন, তার থেকে এখন একেবারে আলাদা। কাজেই সমসাময়িক তৈরি করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না।
মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় চলে গিয়েছে... ২০জনের মৃত্যু! কোনও মৃত্যুকেই জাস্টিফাই করা যায় না। আমি নেপালিদের সঙ্গে বড় হয়েছি বলে জানি, এমনিতে তারা ঠান্ডা মাথার, বন্ধুবৎসল। কিন্তু রেগে গেলে তাদের আটকানো মুশকিল। যোদ্ধার জাত।
ফেলুদার মতো বাস্তবে গোয়েন্দাগিরি করেছেন কখনও?
অল্পবিস্তর গোয়েন্দাগিরি করতেই হয় (হাসি)। ধরা যাক নতুন কারও সঙ্গে কাজ করছি, তার সম্বন্ধে খোঁজ নিতে হয়। তার কথা বলা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে বোঝার চেষ্টা করি যা বলছে তা করবে কি না।
বলিউডে নতুন কী কাজ আসছে?
বলিউডের তিনটে কাজ আসছে। কিন্তু বলা বারণ (হাসি)। মুম্বইতে থাকলে অনেক বেশি কাজ পেতাম। কিন্তু নিজের শর্তে সাফল্য পেতে চাই। তার জন্য নিজের বিশ্বাস, সততা, লাইফস্টাইল বদলাব না।