বৃদ্ধাশ্রমে প্রথমবার হচ্ছে দুর্গাপুজো, উৎসবের স্বাদ পাবেন আবাসিকরা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পুরুলিয়া জেলার আদ্রার মণিপুর বৃদ্ধাশ্রমে এই বছর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শারদোৎসব। একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গে নিয়ে যাঁরা বেঁচে আছেন, বৃদ্ধাশ্রমের সেই সব আবাসিকরাও এবার পাবেন শারদীয় উৎসবের স্বাদ। তাঁদেরও মুখে ফুটবে হাসি। এই বিশেষ উদ্যোগ যে শুধু একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে তা নয়, বরং জীবনের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোর জীবনে নতুন করে আলো জ্বালানোর এক অনন্য চেষ্টা। এই ধরনের উদ্যোগগুলি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবীণদের জীবনে আনন্দ ও নতুন উদ্যম নিয়ে আসে এবং তাঁদের নিঃসঙ্গ জীবনে একটু স্বস্তি জোগায়।
পুজো এলেই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা তাঁদের ফেলে আসা সোনালী অতীত ও পারিবারিক স্মৃতিচারণ করেন। অনেক স্মৃতি সুখের হলেও, কিছু এমন স্মৃতি আছে যা তাঁদের মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যাঁরা অবহেলিত ছিলেন এবার তাঁদের মুখে ফুটবে উৎসবের হাসি। আদ্রার মণিপুর বৃদ্ধাশ্রম জুড়ে এখন সাজ সাজ রব। আবাসিকদের তৎপরতায় পুরোদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার চেহারায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যস্ততা।বৃদ্ধাশ্রমে থাকা আবাসিকদের মধ্যে সত্য মাহাতো, পুটুবালা পাণ্ডা, যাদব মাহাতোরা জানান, ‘পরিবারের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিরা কবেই আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সারা বছর ভুলে থাকলেও পুজোর সময়টাতে তাদের কথা বেশি করে মনে পড়ে। বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের আগমন সেই শূন্যতাকে কিছুটা হলেও পূরণ করবে।’
আবাসিক পল্টু চক্রবর্তীর কথায়, পুজোর ক’টা দিন মন ভালো রাখতে হোম থেকে নবকুমারবাবু প্রতিবছর গাড়ি করে আমাদের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু অনেক পুজো মণ্ডপে আমাদের দেখে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতেন। আমাদের ঘৃণার চোখে দেখা হত। মনে খুব দুঃখ পেতাম। এবার আর আমরা কোথাও যাব না। এবার মা আমাদের বাড়িতেই আসছেন। মাকে নিয়েই পুজোর দিনগুলো আমরা সব কিছু ছেড়ে ভুলে থাকব।’ এই উদ্যোগ মণিপুর বৃদ্ধাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার দাসের। তাঁর এই মানবিক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন গোটা মণিপুর গ্রামবাসী। আর তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতায় বৃদ্ধাশ্রমে এবার প্রথমবার মাতৃ আরাধনার সূচনা হতে চলেছে।
বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন শুধুমাত্র একটি সামাজিক দায়িত্ব নয় বরং এটি মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছেন হোমের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার দাস। তিনি জানান, ‘আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল এখানে মায়ের পুজোর আয়োজন করব। অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। অবশ্য এই আনন্দের পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বেহালার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা পুজোর দুটো দিনের সমস্ত খরচ নিজেরা বহন করে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন বলে কথা দিয়েছেন।’ তাদের এই মানবিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান নবকুমারবাবু। তিনি জানিয়েছেন, এই হোমে ১১জন বৃদ্ধ ও ১৭ জন বৃদ্ধা-সহ মোট ২৮ জন আবাসিক থাকেন। যাঁরা পরিবার-পরিজন হারিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের একাকিত্ব দূর করতে পুজো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুজোর দিনগুলিতে গল্প-আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া করে আশ্রমের আবাসিকরা নতুন করে আনন্দ খুঁজে পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।