• মানুষের দেহে কত প্লাস্টিকের কণা রয়েছে, জানলে আকাশ থেকে পড়বেন
    আজকাল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ক্ষতি নিয়ে আজ আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, প্লাস্টিকের বোতলের জল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে ঝুঁকি তৈরি করছে, তা এখনও পর্যাপ্তভাবে গবেষণা করা হয়নি।

    পরিবেশবিদ সারাহ সাজেদির জীবনের মোড় ঘুরে যায় থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ সফরে। আন্দামান সাগরের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে করতে তিনি যখন নিচে তাকান, পায়ের নিচে পড়ে থাকা অসংখ্য প্লাস্টিকের টুকরো এবং বিশেষ করে জলের বোতল দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। সেই থেকেই প্লাস্টিক বর্জ্যের বিরুদ্ধে কাজকে তিনি জীবনের লক্ষ্য করে তোলেন। সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বে প্রকাশিত একটি গবেষণা Journal of Hazardous Materials-এ ছাপা হয়েছে, যেখানে মূল ফোকাস ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য জল বোতল।

    গবেষণায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের বোতল আজ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সাজেদি ও তাঁর সহলেখকরা মোট ১৪১টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করেন, যাতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরে কী প্রভাব ফেলছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

    একজন মানুষ বছরে গড়ে ৩৯,০০০ থেকে ৫২,০০০টি প্লাস্টিক কণা শরীরে গ্রহণ করছে। যারা বোতলের জল বেশি পান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বাড়ে—প্রায় ৯০,০০০ বেশি কণা। সাজেদির সতর্কবাণী আরও স্পষ্ট: “জরুরি অবস্থায় বোতলের জল ঠিক আছে, কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার মোটেও নিরাপদ নয়। এটি হঠাৎ বিষক্রিয়ার সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ধীরে ধীরে জমে ওঠা ক্ষতির ঝুঁকি।”

    গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ শরীরে নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, প্রজনন সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, ক্যান্সারের ঝুঁকি। অন্য গবেষণাতেও দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত থেকে শুরু করে অ্যান্টার্কটিকার মতো নির্জন স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থাৎ, এই সমস্যা গোটা বিশ্বের এবং এড়ানো প্রায় অসম্ভব।

    অবশ্য বোতলজাত জল শিল্প নিজেদের অবস্থান রক্ষা করছে। আন্তর্জাতিক বোতলজাত জল সমিতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো সমস্যায় জর্জরিত আধুনিক সমাজে বোতলজাত জল একটি “নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প।” তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ কলের জল নিরাপদ হলে বোতলের জল তার চেয়ে কোনও বাড়তি পুষ্টিগুণ দেয় না, বরং বাড়তি ঝুঁকি যোগ করে—মাইক্রোপ্লাস্টিকের। পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্যের মাধ্যমে পরিবেশেও বিশাল ক্ষতি করে।

    এই গবেষণার বিশেষত্ব হল, এটি মেটা-অ্যানালাইসিস—অর্থাৎ একাধিক গবেষণার তথ্য একত্র করে বড় চিত্র তুলে ধরা। ফলে এর সিদ্ধান্তগুলো আরও শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ানো। তবুও লেখকেরা স্বীকার করেছেন, প্লাস্টিক বোতলের সরাসরি প্রভাব নিয়ে এখনও বহু গবেষণার ঘাটতি আছে, অথচ এর ব্যবহার প্রতিদিনই বাড়ছে।

    প্রথমত, প্রয়োজন না হলে প্লাস্টিক বোতলজাত জল ব্যবহার না করা। পরিবর্তে কাচ বা ধাতব বোতল ব্যবহার করা যায়। দ্বিতীয়ত, দৈনন্দিন জীবনে যতটা সম্ভব প্লাস্টিক কম ব্যবহার করা, যাতে ঘরে ও পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ কমে। জরুরি প্রয়োজনে বোতলের জল উপকারী হলেও, প্রতিদিনের জীবনে এর ব্যবহার মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে বিষ ঢালছে। এখনই সচেতন না হলে এর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ হতে পারে।
  • Link to this news (আজকাল)