ভারতের বর্ষার সঙ্গে এল নিনোর সম্পর্ক কী, নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য...
আজকাল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের গ্রীষ্মকালীন বর্ষা নিয়ে বহুদিন ধরেই এক প্রচলিত ধারণা ছিল এল নিনো আসলেই দেশে খরা ডেকে আনে, কারণ এটি বর্ষার বৃষ্টিপাত কমিয়ে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে একেবারে উল্টো চিত্র। গবেষণায় বলা হয়েছে, এল নিনো বর্ষার সামগ্রিক বৃষ্টিপাত কমালেও দেশের সবচেয়ে বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে প্রতিদিনের বৃষ্টিকে আরও তীব্র করে তোলে।
এল নিনো কী?স্প্যানিশ ভাষায় “এল নিনো” শব্দের অর্থ ছোট ছেলে। এটি এক ধরনের জটিল, পর্যায়ক্রমিক আবহাওয়া প্রক্রিয়া, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশের সমুদ্রপৃষ্ঠের জল অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ হয়ে ওঠে। এর ফলে বাণিজ্যিক বায়ু দুর্বল হয়ে যায় এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে জানা গেছে, এই পরিবর্তন ভারতের গ্রীষ্মকালীন বর্ষাকে দুর্বল করে এবং দেশের অনেক অংশে খরার পরিস্থিতি তৈরি করে। তবে আগের গবেষণাগুলো প্রধানত মৌসুমভিত্তিক গড় বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল ছিল।
এবার বিজ্ঞানীরা খুঁজে দেখেছেন চরম দৈনিক বৃষ্টি এবং তার সঙ্গে এল নিনোর সম্পর্ক। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পত্রিকা সায়েন্সে । দলটি ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের ১৯০১ থেকে ২০২০ সালের দৈনিক বৃষ্টির রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে। এরপর ১৯৭৯ থেকে ২০২০ সালের বায়ুমণ্ডলীয় তথ্য ব্যবহার করে কোন ভৌত কারণ এই প্রবণতার পেছনে কাজ করছে, তা যাচাই করা হয়েছে।
গবেষণায় স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, এল নিনো ভারতের বৃষ্টির ধরনকে দুইভাবে প্রভাবিত করে শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে (দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম ভারত): মোট বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং প্রবল বর্ষণের ঘটনাও হ্রাস পায়। ভেজা অঞ্চলগুলোতে (মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত): বর্ষণ হয় কম দিনে, তবে বৃষ্টির তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়।
এর কারণ হল কনভেকটিভ বুয়েন্সি নামক এক ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় শক্তি, যা ঝড়-বৃষ্টিকে ত্বরান্বিত করে। এল নিনো সময়ে ভেজা অঞ্চলে এই শক্তি বাড়ে, ফলে প্রবল বর্ষণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ভারতের বর্ষা এলাকায় ২৫০ মিমি-এর বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা এল নিনো বছরে ৪৩% বেড়ে যায়। মধ্য ভারতের বর্ষা অঞ্চলে এই প্রবণতা আরও বেশি—প্রায় ৫৯% বৃদ্ধি। গবেষকরা মন্তব্য করেছেন, “এল নিনো যত শক্তিশালী হয়, বর্ষার সবচেয়ে সিক্ত এলাকায় দৈনিক প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনাও তত বাড়ে।”
এমন প্রবল বর্ষণের ফল ভয়াবহ হতে পারে। হঠাৎ বন্যায় গ্রাম ভেসে যাওয়া, ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়া, মানুষের জীবিকা বিপর্যস্ত হওয়া। তাই কৃষক ও প্রশাসনের জন্য এই তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষক দলটি বলেছে, এই ফলাফল ভবিষ্যতে আরও দক্ষ ENSO-ভিত্তিক মৌসুমী পূর্বাভাস তৈরিতে সহায়ক হবে। অর্থাৎ, এল নিনো প্যাটার্ন আগে থেকে বুঝে ভারত সরকার ও কৃষক সমাজ যদি প্রস্তুতি নিতে পারে, তবে বন্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে। এল নিনো ভারতের বর্ষাকে শুধু খরা নয়, বরং চরম দৈনিক বর্ষণের দিক থেকেও প্রভাবিত করে। নতুন এই গবেষণা বন্যা মোকাবিলার জন্য পূর্বাভাস ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দরজা খুলে দিল।