ঋতু অনুযায়ী বর্ষা কাটিয়ে শরতের আগমন ঘটলেও বর্ষার বিদায় নেওয়ার নাম নেই। এমতবস্থায় মা দুর্গার কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্যোগ-দুর্ভোগ কাটিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেছেন। শনিবার হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয় এবং শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের দুর্গাপুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করেছেন মমতা। দুর্যোগের আবহে প্রত্যেক মণ্ডপ থেকেই তিনি দিয়েছেন সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার টিপস। বৃষ্টিতে না ভেজার পরামর্শ দিয়ে টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়েছেন তাঁর শরীর খারাপের কথা। এই আবহাওয়ায় সকলকে খুব সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২-৩ দিন মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার পুজো উদ্বোধন করবেন তিনি। এদিন মণ্ডপ উদ্বোধনের সময় ফিতে কাটলেও কোনও মণ্ডপেই ঢোকেননি মমতা। বিরোধীদের সমালোচনার মধ্যে এদিন তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পিতৃপক্ষে তিনি শুধু মণ্ডপের উদ্বোধন করেন, পুজোর নয়। মহালয়ার দিন থেকে তিনি মাতৃপ্রতিমার উদ্বোধন করবেন। বাংলার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলতে গিয়ে ডিভিসি-কেও আকারে ইঙ্গিতে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার দুপুরের দিকে কলকাতায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘দুপুরে এত বাজ পড়ছিল আমি লতাকে বললাম (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা) শাঁখ বাজাও। তারপর একে একে সবাই শাঁখ বাজাতে শুরু করল। তারপর বজ্রপাত ধীরে ধীরে কমে গেল।’
উল্লেখ্য, এদিনই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর আসে কালীঘাটে তাঁর পাড়াতেই একটি বাড়িতে বাজ পড়ে ছাদ ভেঙে গিয়েছে। তবে, বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন বাসিন্দারা। মণ্ডপ উদ্বোধনের আগে সেখানে গিয়ে তাঁদের খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবেশী মমতাকে পাশে পেয়ে আপ্লুত বাসিন্দারা। এরপর বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পুজো উদ্বোধন করতে বের হন মুখ্যমন্ত্রী। পুজোর পাঁচদিনই যে বৃষ্টিপাত হতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, ‘বর্ষা এবার অনেক আগে এসেছে। আর যাওয়ারই নাম নেই। এই বৃষ্টি, বাজ পড়া – এসবের কারণে পুজো উদ্যোক্তারা খুব চিন্তিত। তবে তাঁদের কৃতিত্ব যে এত দুর্যোগের মধ্যেও দ্রুত মণ্ডপের কাজ শেষ করছেন। কারণ, এখন তো ষষ্ঠীর মধ্যে পুরস্কার ঘোষণা হয়ে যায়। তাই তাঁদের কাজ শেষ করতেই হবে।’
মমতার মতে, সুস্বাস্থ্য থাকলে সম্পদ আসবে। শ্রীভূমি থেকে সকলকে ফল খাওয়ার এবং হাঁটাহাঁটি-ঘোরাঘুরি করার পরামর্শ দেন। কারণ তাঁর মতে, সুস্থ না থাকলে পয়সা রোজগার করেও লাভ নেই। স্বাস্থ্য থাকলে সম্পদ আসবে। এদিন তাঁর কথায় উঠে আসে গায়ক জুবিন গর্গের কথা। অল্প বয়সে তাঁর মৃত্যুতে ফের একবার শোকপ্রকাশ করেন মমতা। এদিন ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মন্ত্রী তথা শ্রীভূমির পুজো উদ্যোক্তা সুজিত বোসকে সতর্ক করে দেন তিনি।
পিতৃপক্ষে উৎসবের সূচনা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ অব্যাহত। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘মহালয়ার আগে আমি মণ্ডপ উদ্বোধন করি, পুজোর নয়। মহালয়ার আগের দিন উৎসব উৎসারিত হয় এবং মহালয়ার দিন অর্থাৎ মাতৃপক্ষে মায়ের উত্তরণ হয়।’ এদিন শ্রীভূমি থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকাতার বুকে দুর্গাঙ্গন হবে তবে তা নির্মাণ করতে সময় লাগবে। হাতিবাগানের মণ্ডপ উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অতীন ঘোষ এবং তাঁর মেয়ে তথা তৃণমূল যুবনেত্রী প্রিয়দর্শিনী ঘোষ। টালার মণ্ডপ উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল যুবনেত্রী শ্রেয়া পাণ্ডে।