• কুড়মি আন্দোলনে কি বদলে যেতে পারে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ? কেন ফের রাস্তায় তারা?
    এই সময় | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ফের শিডিউল্ড কাস্ট (ST) বা তফসিলি উপজাতির মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। এই নিয়ে গত চার বছরের মধ্যে চতুর্থবার এই আন্দোলন দেখা গেল। বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই আন্দোলন রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

    কেন ফের আন্দোলন? কী তাঁদের দাবি? কারা এই কুড়মি সম্প্রদায়? সর্বোপরি এই আন্দোলনের কতটা প্রভাব পড়তে পারে রাজনৈতিক জগতে, আসুন জেনে নেওয়া যাক —

    কুড়মি সম্প্রদায়ের এই নতুন আন্দোলন আসলে তাদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামেরই অংশ। তাদের দাবি, ১৯৩১ সালের জনগণনায় তাদের তফসিলি উপজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫০ সালে কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাদের এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

    ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’ (AKS) নামে এক সংগঠন এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

    সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এই ধরনের বিক্ষোভকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করলেও, কুড়মিরা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।

    তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, তারা আজও ঐতিহ্যগত ভাবে আদিবাসীদের মতোই আচার-আচরণ পালন করে। তাই ব্রিটিশ আমলে তাদের যে আদিবাসী পরিচয় দেওয়া হয়েছিল, তারা সেই পরিচয় ফিরে পাওয়ার যোগ্য।

    কুড়মিরা একটি কৃষিজীবী সম্প্রদায়। মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার জঙ্গলমহল ও ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চলে তারা ছড়িয়ে রয়েছে।

    ১৯৯৫ সালে তাদের OBC তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে ঝাড়খণ্ড সরকার তাদের ST তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি।

    ১৯৫০ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে যখন তফসিলি উপজাতির তালিকা তৈরির সময়ে কুড়মিদের বাদ দেওয়া হয়েছিল।

    কুড়মিদের যুক্তি, ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী তারা আদিবাসী এবং তারা সেই স্বীকৃতি ফিরে পেতে চায়। তাদের ভাষা, কুড়মালিকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছে তারা।

    পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৫০ লক্ষ কুড়মি ভোটার রয়েছে। ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া জেলার প্রায় ৩০টি বিধানসভা আসনে এর বড় প্রভাব দেখা যায়।

    গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী এই আসনগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস এবং BJP-র মধ্যে ভোটের ব্যবধান খুবই কম ছিল। তাই কুড়মিদের ভোট পশ্চিমবঙ্গে দুই পক্ষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    চলতি আন্দোলনের সময়ে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। আসন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।

    এ ছাড়াও, এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দিক হলো রাজ্যের অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠী এই আন্দোলনের বিরোধিতা করছে। তাদের মতে কুড়মিরা ST মর্যাদা পেলে তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কমে যাবে।

    তাই কুড়মিরা যদি কোনও নির্দিষ্ট দলকে ভোট দেয়, তা হলে অন্যান্য উপজাতিরা সেই দলের বিরুদ্ধে যেতে পারে। এর ফলে এক নতুন ধরনের ভোট বিভাজন তৈরি হতে পারে। যা রাজনৈতিক সমীকরণের জটিলতা বাড়াতে পারে।

    তবে শুধুমাত্র ৩০টি আসন গোটা রাজ্যের ভোটের অঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

    ঝাড়খণ্ড ও বিহারেও (বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জেলাগুলিতে) কুড়মিদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। তাই এই আন্দোলনের প্রভাব এই এলাকগুলিতেও পড়তে পারে। সব মিলিয়ে, এই আন্দোলন শুধু সামাজিক স্বীকৃতি নয়, বরং রাজনীতিতেও এক গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)