আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও খবরের শিরোনামে জনপ্রিয় এসইউভি ‘থর’। এবং আবারও এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সৌজন্যে। গতকাল, অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যায় উত্তরপ্রদেশের লখনউতে একটি বেপরোয়া থরের সঙ্গে ই-রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন দুই যুবক। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ছ'জন। মৃতদের নাম মোহিত (২৩) এবং উমেশ সাহু (২৬)। ঘটনার পরেই গাড়ি ফেলে চম্পট দিয়েছিল চালক। যদিও পরে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে লখনউ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দুর্ঘটনার ভয়াবহ দৃশ্য ধরা পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, উল্টো দিক থেকে আসা একটি ই-রিকশাকে সজোরে, মুখোমুখি ধাক্কা মারে তীব্র গতিতে ছুটে আসা কালো রঙের থর এসইউভিটি। ধাক্কার তীব্রতায় ই-রিকশাটি কার্যত দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আর্তনাদ এবং হাহাকারে ভরে ওঠে গোটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মোহিত এবং উমেশকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি ছ'জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরেই গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায় চালক। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির নম্বর প্লেটের সূত্র ধরে তল্লাশি চালিয়ে রাতেই অভিযুক্ত চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং গাফিলতির কারণে মৃত্যু ঘটানোর মতো একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গাড়িটিকেও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
তবে লখনউয়ের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। বিগত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে এই জনপ্রিয় এসইউভির। মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় এই গাড়ি বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে চালকদের বেপরোয়া আচরণ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘স্টান্ট’ দেখানোর উদ্দেশ্যে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর ভিডিও আকছার দেখা যায়।
গত মাসেই দিল্লির অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা বলে পরিচিত চাণক্যপুরীতে একটি থরের ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। তারও আগে, গত জুলাই মাসে জম্মু থেকে এক শিউরে ওঠার মতো ভিডিও সামনে আসে। সেখানে দেখা যায়, একটি থর প্রথমে এক স্কুটার আরোহীকে ধাক্কা মারে। এখানেই শেষ নয়, এর পর গাড়িটি পিছনের দিকে চালিয়ে এসে মাটিতে পড়ে থাকা ওই আরোহীর উপর দিয়ে চলে যায়, যার ফলে তিনি গুরুতর জখম হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, থরের মতো শক্তিশালী এসইউভি চালানোর জন্য যে ধরনের সতর্কতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন, অনেক ক্ষেত্রেই চালকদের মধ্যে তার অভাব দেখা যায়। গাড়ির শক্তির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ধরনের ‘ক্ষমতার আস্ফালন’ অনেককে বেপরোয়া হতে উৎসাহিত করে। বারংবার একই গাড়ির নাম দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় এ বার এর নিরাপত্তা এবং চালকদের মানসিকতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। লখনউয়ের ঘটনা সেই বিতর্ককেই নতুন করে উস্কে দিল।