আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহালয়ার সকালে পরপর দুর্ঘটনা বাংলায়। মহালয়ার পুণ্যতিথিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গঙ্গায় স্নান করতে এসে প্রাণ হারাল এক কিশোর। রবিবার সকালে নদিয়া জেলার কল্যাণী থানার রথতলা রানী রাসমণি ঘাটে ভাগীরথী গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে, জলে ডুবে মৃত্যু হয় রোহিত বল নামে এক কিশোরের। আনুমানিক ১৮ বছর বয়সি রোহিত গয়েশপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাটাগঞ্জ তিন নম্বর এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মহালয়ার সকালে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল রোহিত। গন্তব্য ছিল কল্যাণীর রথতলা ঘাট। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও তারা গঙ্গায় স্নান করে পুণ্য লাভ করতে গিয়েছিল। কিন্তু আনন্দের মুহূর্তই মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় বিভীষিকায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্নান করার সময় হঠাৎ করেই নদীর গভীর জলে তলিয়ে যায় রোহিত। বন্ধুরা প্রথমে নিজেরাই খুঁজতে শুরু করলেও যখন খোঁজ না মেলে, তখন তাঁরা চিৎকার শুরু করেন।
তাঁদের চিৎকারে আশেপাশের স্নানার্থীরা এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তল্লাশি। প্রায় আধঘণ্টা ধরে জলে খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে উদ্ধার করা হয় রোহিতকে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণী জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রোহিতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন রোহিতের মা, বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। হাসপাতাল চত্বরে হৃদয়বিদারক দৃশ্য সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশীরাও এই খবর শুনে ছুটে আসেন। পরিবারের দাবি, রোহিত সাঁতার জানত না। বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতে গিয়েই ঘটল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এত বড় উৎসবের দিনে পর্যাপ্ত সংখ্যক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও পর্যবেক্ষণ না থাকায় প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুরক্ষার জন্য পুলিশ মোতায়েন ছিল এবং তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেও যায়। কিন্তু নদীর স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে দ্রুত উদ্ধার করেও রোহিতকে বাঁচানো যায়নি।
মৃত রোহিতের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং মানসিকভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এই দুর্ঘটনা সকলের মনে একটাই প্রশ্ন তুলেছে—বড় উৎসবের দিনে কি গঙ্গার ঘাটগুলিতে আরও কড়া নিরাপত্তা রাখা উচিত।
মহালয়ার সকালে আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে উলুবেড়িয়া। জানা গেছে, এদিন সকালে পরিবারের সঙ্গে তর্পণ করতে গিয়ে তলিয়ে গেল এক নাবালিকা। নদীতে ডুবুরি নামিয়ে ইতিমধ্যেই নাবালিকার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খড়গপুরের গোলাবাজার থেকে পরিবারের সঙ্গে তর্পণ করতে উলুবেড়িয়া কালীবাড়ি ঘাটে আসে ওই নাবালিকা। হুগলি নদীতে নামার পরই চারজন তলিয়ে যেতে শুরু করেন। স্থানীয়রা জলে নেমেই তড়িঘড়ি করে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। কোনও মতে তিনজনকে উদ্ধার করে পাড়ে তুলে আনা গেলেও, নাবালিকাকে উদ্ধার করা যায়নি। হুগলি নদীতে তলিয়ে যায় ওই নাবালিকা।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে আসে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গে ডুবুরি নামিয়ে নাবালিকার খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখনও নাবালিকার খোঁজ মেলেনি।