• ভোট-পুজোর আগে দুর্গা, সতর্ক চোখ নীতীশদের
    আনন্দবাজার | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • দুর্গা আসেন প্রতি বছরই। তবে এ বার বাড়তি উদ্যমে দশ হাতে দুর্গা পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না নীতীশ কুমারের প্রশাসন! বিহারে এ বার ভোটের বছর বলে কথা!

    রাজধানী পটনা-সহ গোটা বিহারে দুর্গা পুজোর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা মসৃণ রাখতে এখন তৎপর রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ এবং তাঁর জোটসঙ্গী বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ তেমনই। শীর্ষ মহলের মনোভাব বুঝেই রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রত্যয় অমৃত গোটা প্রশাসনকে বার্তা দিয়েছেন ত্রুটিহীন ও নিরাপদ পুজো আয়োজন নিশ্চিত করার জন্য। সূত্রের খবর, পুজোর দিনগুলোয় ২৪ ঘণ্টার কোনও সময়েই যাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা ছিন্ন না হয়, তা দেখতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ দফতরকে। বিহারে এমন ব্যবস্থা ও তৎপরতা সচরাচর ছট পুজোর জন্য থাকে। এ বার সেই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাচ্ছে দুর্গা পুজো থেকেই। নেপালের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মাথায় রেখে সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকছে বাড়তি সতর্কতাও।

    উৎসবের মরসুম মিটলেই বিহারে বিধানসভা ভোট আসন্ন। তার দামামা বেজে গিয়েছে আগেই। সেই পরিমণ্ডলে বাড়তি উত্তেজনা সরবরাহ করেছে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া। বিহারের কয়েক মাস পরে আবার বাংলায় বিধানসভা ভোট। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, নিষ্কণ্টক দুর্গা পুজো আয়োজন করে বিহারের পাশাপাশি বাংলার ভোটেও নজর দিতে চাইছে বিজেপি। বাংলা, বাঙালি বা কারও কোনও আচার, উৎসবেই এনডিএ সরকারের কোনও ‘বৈষম্যমূলক’ মনোভাব নেই, এই বার্তা দেওয়ার তাগিদ তাদের রয়েছে এ বার। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে এক রাজ্যের বিজেপি নেতারা অন্য রাজ্যে প্রবাসীদের কাছে পৌঁছচ্ছেন। যেমন, বাংলা থেকেও বিজেপির প্রতিনিধিদের পুজোর মরসুমে বিহারে যাওয়ার কথা।

    বিহার বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এই রাজ্যে দুর্গা পুজোয় বিহারিদের পাশাপাশি বাঙালিরাও একসঙ্গে শামিল হন। মণ্ডপ-সজ্জা, প্রতিমা নির্মাণে বাঙালি শিল্পীরা কাজ করেন। বাংলার মতো না-হলেও বিহারেও দুর্গা পুজোর সঙ্গে ভাল রকম অর্থনীতি জড়িত। তার সঙ্গে রয়েছে সামাজিক বন্ধনের বার্তা। এই উৎসবে অশুভ শক্তি যাতে কোনও ভাবেই কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে, তার জন্য সরকার অত্যন্ত সতর্ক আছে।’’ সূত্রের খবর, বিজেপির তরফে দলীয় নেতাদের বলা হয়েছে, পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে মিলে উৎসব আয়োজনে জুড়ে থাকতে। জেডি(ইউ) নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধরির মতে, দুর্গা পুজোর সঙ্গে সঙ্গে এই সময়ে রামনবমীও পূর্ণ মর্যাদায় উদযাপন করা হবে।

    রাজ্যের বিভিন্ন মঠ ও ধর্মীয় সংগঠনগুলির প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ বার্তা দিয়েছেন, পুজোর সময়ে কোনও অশান্তির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসনের তরফে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের সংশ্লিষ্ট জেলায় সুষ্ঠু ভাবে পুজো সম্পন্ন করাতে হবে। বিশেষত, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বাড়তি নজর রাখতে হবে। পুজো মণ্ডপে পর্যাপ্ত সিসিটিভি-র ব্যবস্থা না-থাকলে পুলিশকে পুজোর অনুমতি দিতেও নিষেধ করা হয়েছে।

    পটনার মেয়র সীতা সাহুর বক্তব্য, শুধু রাজধানী শহরেই এ বার দু’হাজারের বেশি দুর্গা পুজোর আবেদন জমা পড়েছে। সুরক্ষা বিধি বিবেচনায় রেখে তার মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্রয়োজনীয় অনুমতি পাচ্ছে। তবে প্রবল বৃষ্টিতে এই মুহূর্তে জলমগ্ন পটনা শহর বেশি উদ্বেগে রেখেছে পুজো উদ্যোক্তা ও জনতাকে!
  • Link to this news (আনন্দবাজার)