তর্পণে গিয়ে একাধিক অঘটন, তলিয়ে গেলেন দুই তরুণ-তরুণী
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পিতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দেবীপক্ষের সূচনা। পিতৃ তর্পণের উদ্দেশে রবিবার ভোর থেকে গঙ্গ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নদীর তীরে ঢল নামে পুণ্যার্থীর। তর্পণ এবং গঙ্গাস্নান নির্বিঘ্নে করার জন্য বাড়তি নজর ছিল পুলিশ-প্রশাসনের। অতিরিক্ত সতর্কতার পরও হাওড়া ও নদিয়ায় ঘটে গেল অঘটন। নদীতে তলিয়ে গেলেন দুই তরুণ-তরুণী। অন্যদিকে, হুগলিতে ভিড়ের মধ্যে হার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠল। জোয়ারে তলিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েক জনকে উদ্ধার করল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ।
জানা গিয়েছে, রবিবার মহালয়ার সকালে উলুবেড়িয়ার কালীবাড়ি গঙ্গাঘাটে গিয়েছিলেন খড়্গপুরের এক তরুণী। স্রোতের টানে ভেসে যান ওই তরুণী। মা-বাবা এবং আত্মীয়দের চোখের সামনেই তলিয়ে যান ছাত্রীটি। গঙ্গাঘাটে আসা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নদীতে চার জন নামেন। এরপর স্রোতের টানে সকলেই তলিয়ে যেতে থাকেন। উদ্ধারকারীরা তা দেখে উদ্ধারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিন জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং ডুবুরি মেয়েটির খোঁজে তল্লাশি চালায়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
উলুবেড়িয়ার পর নদিয়ার কল্যাণীর গঙ্গাঘাটেও একই ঘটনা ঘটে। কল্যাণীর রথতলা রানি রাসমণি গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করতে এসেছিলেন ১৮ বছরের রোহিত বল। তর্পণ সেরে স্নান করতে নেমেছিলেন ওই যুবক। স্রোতের টানে ভেসে যান তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এরপর কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তরুণকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর বেশ কিছুক্ষণের জন্য ওই ঘাটে গঙ্গাস্নান বন্ধ রাখা হয়। বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পর ফের তর্পণ শুরু হয়। মৃত তরুণের বাড়ি গয়েশপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
হুগলির চুঁচুড়ায় তর্পণের সময়েও দু’টি দুর্ঘটনা ঘটে। ঘুটিয়াবাজার তামলিপাড়া গঙ্গার ঘাটে তর্পণের জন্য যাওয়া দুই মহিলা এবং এক যুবতী স্রোতের তোড়ে ভেসে যাচ্ছিলেন। সিভিল ডিফেন্স এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের তৎপরতায় রক্ষা পান তাঁরা। এরপর হুগলির সমস্ত গঙ্গারঘাটে মাইকিং করে প্রশাসন। তার মধ্যে চুঁচুড়ার গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করতে গিয়ে দুই ভরির সোনার হার খোয়ালেন এক বৃদ্ধা। চুঁচুড়ার ময়ূরপঙ্খী ঘাটে তর্পণ এবং গঙ্গাস্নানের জন্য ভোর থেকে প্রচণ্ড ভিড় হয়েছিল। চুঁচুড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিপাশা সাহাও গঙ্গাস্নানে গিয়েছিলেন। গঙ্গাস্নান সেরে ঘাটের পাশেই একটি মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করেন, গলার সোনা হার নেই। বৃদ্ধার সঙ্গে তাঁর স্বামী বিমল সাহাও ছিলেন। গঙ্গারঘাটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের কাছে সাহায্য চান তাঁরা। তাঁদের পরামর্শে পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি। প্রায় ২ লক্ষ টাকার সোনার হার খোয়া যাওয়ার দাবি করেন বৃদ্ধা। সোনার হার খুইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
অন্যদিকে, তর্পণে গিয়ে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে দিকে নজর রাখে পুলিশ। চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অলকানন্দা ভাওয়াল, চুঁচুড়া থানার আইসি রামেশ্বর ওঝা প্রমুখ গঙ্গার ঘাটগুলো পরিদর্শন করেন। পুলিশের সেই প্রহরা সত্ত্বেও ঘটে যায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা।