সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কম খরচে পুজোয় ইউরোপ ট্যুর করতে চান? ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট কেটে সোজা চলে আসুন দিল্লি। তারপর ব্লু লাইন মেট্রোয় চেপে নয়ডার সেক্টর ৬১-তে নামলেই কেল্লাফতে। দিল্লির পার্শ্ববর্তী এলাকার যে পুজোগুলিকে হেভিওয়েট বলা যায়, তাদের অন্যতম হল নয়ডা সেক্টর ৬১-র বলাকা দুর্গোৎসব। এবার যারা দাঁড়িয়ে আছে প্রাপ্তবয়স্কতা থেকে মাত্র এক পা দূরে। ১৭তম বছরে বলাকার থিম ‘ইউরোপ ইন নয়ডা’।
বলাকার পুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ শহরের বিখ্যাত সিবেলস প্যালেসের অনুকরণে। ৭০ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট চওড়া মণ্ডপে সপরিবার দুর্গা মূর্তিতে পাওয়া যাবে গ্রিক স্থাপত্যের ছোঁয়া। আবহ তৈরিতে থাকছে বং কানেকশনও। মণ্ডপের আলোকসজ্জার জন্য উদ্যোক্তাদের ভরসা চন্দননগরের আলো। এক কথায় ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও ইউরোপীয় শিল্পের এক অদ্ভুত মিশেল দেখা যাবে বলাকার পুজোয়।
তুলনায় নবীন আনন্দধারা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ বছরের পুজোয় আবার পাওয়া যাবে একেবারে বাংলার গন্ধ। কোভিড পরবর্তী সময়ে ২০২২ থেকে গ্রেটার নয়ডা ওয়েস্টের জনা ৭০ বাঙালি মিলেমিশে শুরু করেন এই পুজো। এই বছর গ্রেটার নয়ডা ওয়েস্টের ৪৮টি আবাসনের ২০০টির বেশি পরিবার হাত মিলিয়েছেন মাতৃ আরাধনায়। বলাকার পুজো হয় এক ব্যাঙ্কোয়েট হলে। তাই এলাহি প্যান্ডেল করার অবকাশ কিছু থাকে না তাদের। যদিও সেই হলের সামনের মাঠে রোজ হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাকি পুরোটা জুড়ে থাকে বাংলা ও বাঙালির ছোঁয়া। ঢাকের তাল, শিঁউলি ফুলের গন্ধ, নিষ্ঠা ভরে মায়ের পুজো। সঙ্গে প্রতিমার সাজ, মণ্ডপসজ্জা ? পুরোটা জুড়েই বাঙালিয়ানা। এবার যেমন মায়ের সাজ আসছে কাটোয়া থেকে।
গ্রেটার নয়ডা কালীবাড়ি, যাদের পোশাকি নাম গ্রেটার নয়ডা শারদীয়া সাংস্কৃতিক সমিতি, সেখানে আবার এবারে মহাধুম। দেখতে দেখতে এবার তাদের পুজোর রজতজয়ন্তী বর্ষ। স্বাভাবিকভাবেই ২৫তম বছরে অন্যবারের থেকে একটু আলাদা পুজো করাই লক্ষ্য আয়োজকদের। পুজো মণ্ডপের চারদিকে হায়দরাবাদের বিখ্যাত চারমিনারের আদলে তৈরি হচ্ছে চারটে স্তম্ভ। প্যান্ডেল তৈরি করবেন বারাসত থেকে আসা কারিগররা। লাইটের জন্য ভরসার নাম কেয়ার অফ চন্দননগর।
নয়ডার আরেক বিখ্যাত পুজোর নাম সেক্টর ৩৪-এর বঙ্গীয় সমিতি। তাদের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার আদলে। মণ্ডপের বহির্সজ্জা দেখে মনে হবে ভিতরে দেখা মিলতে পারে যোগী আদিত্যনাথদের। তবে এই দিকে কড়া নজর রাখছেন উদ্যোক্তারা। দিল্লি মুখ্যমন্ত্রীর মায়ের মূর্তির সামনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখার নিদানে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তার রেশ যেন কোনওভাবেই কালিমালিপ্ত করতে না পারে বাঙালির শ্রেষ্ঠ পার্বণকে, সেদিকে নজর দিতে মণ্ডপের ভিতর থাকবে না কোনওরকম রাজনৈতিক বিষয়। মণ্ডপের অন্দরমহলে থাকবে শুধুই মায়ের ছোঁয়া।