• ১৫ মাসেও প্রকাশ হয়নি বৃত্তির তালিকা
    আজকাল | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত পনেরো মাস ধরে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার গবেষক, যাঁরা ন্যাশনাল ফেলোশিপ ফর আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (NFOBC)-এর জন্য যোগ্য। ইউজিসি-নেট কিংবা সিএসআইআর-নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ (JRF)-এর কাট-অফে সামান্য পিছিয়ে পড়া এই গবেষকদের জন্য ২০১৪-১৫ সালে শুরু হয়েছিল এনএফওবিসি প্রকল্প।

    ফেলোশিপে নির্বাচিত গবেষকরা জেআরএফের সমান সুযোগ পান—প্রতি মাসে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোকে দেওয়া হয় ৩৭ হাজার টাকা এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোকে ৪২ হাজার টাকা (২০২৩ সালের জানুয়ারির  হার অনুযায়ী)। এর সঙ্গে থাকে বাড়িভাড়া ভাতা ও দুই বছর অন্তর কনটিনজেন্সি অনুদান। কিন্তু জাতীয় পিছিয়ে পড়া শ্রেণির আর্থিক সহায়তা  ও উন্নয়ন কর্পোরেশন (NBCFDC), যাদের দায়িত্ব নির্বাচিত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা, তারা টানা তিনটি চক্রে (জুন ২০২৪, ডিসেম্বর ২০২৪ ও জুন ২০২৫) তালিকা প্রকাশ করেনি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—সামাজিক ন্যায় ও অধিকার মন্ত্রকের (MoSJE) “ক্লিয়ারেন্স” না পাওয়া।

    ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই, শোভি যাদব নামের এক গবেষক আরটিআই করেন। উত্তরে এনবিসিএফডিসির ফার্স্ট অ্যাপেলেট অথরিটি সুরেশ কুমার স্বীকার করেন যে ইউজিসি-নেট জুন ২০২৪ পরীক্ষার নির্বাচিত প্রার্থীর তালিকা তারা জাতীয় পরীক্ষণ সংস্থা (NTA) থেকে পেয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রকের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তা প্রকাশ সম্ভব নয়। ডিসেম্বর ২০২৪ পরীক্ষার তালিকা এখনও এনটিএ পাঠায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়।

    এদিকে, পুরনো ফেলোশিপপ্রাপ্তদের অর্থপ্রদান এখনো চলছে, তবে গড়ে দুই মাস দেরি হচ্ছে। সামাজিক ন্যায় ও অধিকার মন্ত্রকের উপ-সচিব রাজেশ কুমার মাক্কার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এনবিসিএফডিসির সিপিআইও ইন্দু ঠাকুরকেও প্রশ্ন করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। আশ্চর্যের বিষয়, একই মন্ত্রকের অধীনে এসসি ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপ তালিকা নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে এবং অর্থপ্রদানও সময়মতো হচ্ছে।

    রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অমিত কুমার বলেন, “ফেলোশিপ চালুর পর থেকেই দেরি হয়েছে, কিন্তু এখন টানা তিন চক্রে কোনও তালিকাই প্রকাশ হয়নি। এতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।” হায়দরাবাদ সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাই কিরণ জানান, “স্টাইপেন্ড ছাড়া সেমেস্টারের ফি দেওয়া, মাঠপর্যায়ের কাজ করা, পরিবার চালানো—সবই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। চাকরি করা নিষিদ্ধ, অথচ সরকার অর্থ ছাড়ছে না। আমরা টিকে থাকব কীভাবে?”

    আর্থিক চাপের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে মানসিক সমস্যাও। পরিবার থেকে গবেষণা ছেড়ে চাকরি নেওয়ার চাপ, হতাশা, এমনকি বিষণ্ণতায় ভুগছেন অনেকে। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গৌতম কুমার শ’ বলেন, “প্রতিবার বলা হয়—আর ১০-১৫ দিনের মধ্যে তালিকা আসছে। কিন্তু দেড় বছর কেটে গেল, কিছুই হল না। অন্তত তালিকা প্রকাশ করলে আমরা বুঝতে পারতাম—নির্বাচিত হয়েছি কি না। এখন পুরো জীবন অনিশ্চয়তায় ঝুলে আছে।”

    ২০২৪ সালের নভেম্বরে ৬০ জন গবেষক রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে সতর্ক করেছিলেন, “এভাবে ফেলোশিপ বন্ধ রেখে সরকার সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।” তবুও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে অভিযোগ জানালে মন্ত্রক জানায়, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় তালিকা প্রকাশে দেরি হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালের ২৯ আগস্ট সেই অভিযোগকেই “মামলা নিষ্পত্তি” বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রক নীতি স্থির করে, ইউজিসি পরীক্ষার ফল থেকে তালিকা প্রস্তুত করে, আর অর্থ প্রদান হয় ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে। কিন্তু এনবিসিএফডিসি বলছে, তারা মন্ত্রকের নির্দেশ ছাড়া তালিকা প্রকাশ করতে পারবে না। এই দায় এড়িয়ে চলার খেলায় শিক্ষার্থীদের আস্থা ভেঙে পড়ছে। গবেষকদের মতে, এই দীর্ঘস্থায়ী স্থগিতাবস্থা নিছক প্রশাসনিক সমস্যা নয়, বরং সামাজিক ন্যায় ও সংরক্ষণ নীতির প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দ্রুত অর্থ বরাদ্দ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি নেই। নইলে হাজার হাজার ওবিসি গবেষকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে।
  • Link to this news (আজকাল)