কৌশিক ঘোষ, ভাবনগর (গুজরাত); ‘রো রো’ পরিষেবার মাধ্যমে গাড়ি, বাস, টু হুইলার প্রভৃতি বড়ো জলযান বা ভেসেলে চাপিয়ে নিয়ে ক্যাম্বে উপসাগর পার করে ঘণ্টাতিনেকের মধ্যে ভাবনগর থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় শিল্পসমৃদ্ধ শহর সুরাতে। ঝাঁ চকচকে এক্সপ্রেসেওয়ে ধরে গাড়িতে আমেদাবাদও ঘণ্টা তিনেকের রাস্তা। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য ‘ভাইব্রান্ট গুজরাতের’ অংশ হয়েও নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ঐতিহ্যশালী জেলা শহর ভাবনগরের অনেক বাসিন্দাই। তাঁরা মনে করছেন, ‘বৃদ্ধাবাসে’ পরিণত হয়েছে এই শহর। কারণ আশেপাশে বড়ো মাপের কোনও শিল্প-বাণিজ্য গড়ে না-ওঠায় কর্মসংস্থানের জন্য ভাবনগরের যুবক-যুবতিদের পাড়ি দিতে হচ্ছে ‘উন্নত’ গুজরাতের অংশ সুরাত, আমেদাবাদ, জামনগরসহ বিভিন্ন শহরে কিংবা মহারাষ্ট্রের মুম্বই, পুনেতে। কেউ কেউ রুজির সন্ধানে ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে পাড়ি দিচ্ছেন ইউরোপ-আমেরিকায়।
প্রসঙ্গত, বেআইনিভাবে প্রবেশ করার জন্য ট্রাম্প সরকার বিমানে চাপিয়ে যেসব ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে তাদের একটা বড়ো অংশ ছিল গুজরাতি। ভাবনগর শহরের প্রবীণ বাসিন্দা সঞ্জয় সোনি-সহ অনেকেই জানিয়েছেন, বয়স্করা বাধ্য হয়ে এই শহরে বসবাস করছেন। কম বয়সিরা প্রায় সবাই ছুটছেন বাইরে। কাছাকাছি থাকলে সপ্তাহের শেষে ছুটি কাটিয়ে ফের কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। একসময় হিরে ব্যবসায় এই শহরের নাম ছিল সুরাতের মতোই। কিন্তু এখন সেখানেও মন্দা চলায় দক্ষ কারিগররা সুরাতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
শনিবার ভাবনগরে সভা করে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিল্যানাস করতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাবনগরের কাছে আলংয়ে জাহাজ ভাঙার কারখানার সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু এই শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, আলংয়ে যে ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হয় তা গুজরাতিদের পক্ষে কষ্টকর। সেখানে কাজ করেন মূলত হিন্দিভাষী এলাকার শ্রমিকরাই। শনিবার প্রধানমন্ত্রী এখান থেকে গুজরাত-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যে একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা করেন তার মধ্যে একটিমাত্র ছিল ভাবনগরের। একটি সরকারি হাসপাতাল সম্প্রসারণ প্রকল্পেরও সূচনা হল ওই অনুষ্ঠান থেকে। কিন্তু ঠিক চারবছর আগে ভাবনগরের দেড়শো বছরের বেশি পুরোনো বন্দরে চার হাজার কোটি টাকা খরচে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সিএনজি (প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল তৈরি ও আধুনিকীরণ প্রকল্পের শিল্যানাস করা হয়। কিন্তু সেটি কবে চালু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। কয়েকবছর আগে ভাবনগরের কাছে ধোলেড়াতে ৯০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়নে স্মার্ট সিটি-সহ পরিবেশবান্ধব শিল্প শহরের যে পকিল্পনা করা হয় তার কাজ এখনও তেমন এগোয়নি। জানাচ্ছেন শহরবাসীরা। শহরের সাংবাদিক মহলের কথায়, প্রশাসনের কাছে এইসব প্রকল্পের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে একটাই জবাবই মেলে, রুটিন কাজ এগোচ্ছে। ভাবনগর সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য হেলিকপ্টারে চেপে ধোলেড়ার প্রকল্পস্থলটি পরিদর্শন করেন।