সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: মহারাজাদের দেওয়া বড়দেবীর আদলে অষ্টধাতুর মূর্তিতে আজও পুজো হয় কোচবিহারের বুড়িরপাটের চক্রবর্তী বাড়িতে। পরিবারের প্রাচীন রীতি মেনে এই পুজোয় রয়েছে বলি প্রথা। চক্রবর্তী পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের মহারাজারা সেই সময় বড়দেবীর আদলের এই রকম বেশ কয়েকটি মূর্তি বানিয়ে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবারকে দিয়েছিলেন। তারই একটি পেয়েছিলেন চক্রবর্তী পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। তাঁদের বাড়িতে আগে থেকেই ছিল গোপীনাথ, রাধা ও শালগ্রাম শীলা। পরবর্তীতে পরিবার ভিন্ন হওয়ার সময় প্রশ্ন ওঠে কে কোন দেবতাকে নেবেন। সিদ্ধান্ত হয়, লাল কাপড়ে জড়িয়ে সব দেবতাদের রাখা হবে। যিনি যেটা স্পর্শ করবেন তিনিই সেই বিগ্রহ পাবেন। সেই মতো বড়দেবীর মূর্তিটি আসে বর্তমান চক্রবর্তী পরিবারের অন্যতম সদস্য অরূপ চক্রবর্তী হাতে। দেবী এখানে নিত্য পুজো পান। এই পুজোয় বলি প্রথার প্রচলন রয়েছে।
চক্রবর্তী পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য অরূপ চক্রবর্তী বলেন, বড়দেবীর মূর্তির আদলে প্রায় ১০ ইঞ্চি উচ্চতার একটি অষ্টধাতুর মূর্তি মহারাজারা আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন। কবে দিয়েছিলেন তা জানা যায়নি। আমাদের পরিবার বিভক্ত হওয়ার সময় আমাদের ঘরে এই মূর্তি আসে। পরে কাশি থেকে মহাদেব নিয়ে আসার পর পুজো শুরু হয়। মা এখানে নিত্যপুজো পান।
মা এখানে দশভুজা। দশ হাতেই অস্ত্র। তিনি সিংহের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন। অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করছেন। প্রতিদিন পঞ্চপচারে পুজো হয়। এছাড়া বছরের কয়েকটি বিশেষ পুজো হয়। একসময়ে বলি নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও পরবর্তীতে বলি প্রথা চলে আসছে। এখানে সপ্তমীতে চার জোড়া পায়রা, অষ্টমীতে চারটি পাঁঠা এবং নবমীতে একজোড়া হাঁসা বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। প্রসাদে ফলমূল, খই, মুড়কি সহ অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হয়। পুজোয় ভাং দেওয়ার রীতি আছে। পুজোর দিনগুলিতে বিগ্রহকে পঞ্চামৃতে স্নান করানো হয়। বিশেষ পুজোর দিনে সংকল্প করা হয়। ভোগ, চণ্ডীপাঠ, বলি, হোম ও ষোড়শোপচারে পুজো ও শান্তিজল নিক্ষেপ করা হয়।
এই পুজোয় দেবীপক্ষ থেকে চণ্ডীপাঠ শুরু হয়। যা নবমী পর্যন্ত চলে। চণ্ডীর ত্রয়োদশ অধ্যায় পর্যন্ত এই চণ্ডীপাঠ চলে। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে যুগ যুগ ধরে এই পুজো চলছে। পুজো উপলক্ষ্যে পরিবারের সদস্যরা বাইরে থেকে কোচবিহারে আসেন। কোচবিহারের দুর্গাপুজো মানেই বড়দেবীর পুজো। যা দেবীবাড়িতে থাকা বড়দেবীর মন্দিরে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে হয়। আর চক্রবর্তী বাড়িতে সেই বড়দেবীর আদলের অষ্টধাতুর মূর্তিই পারিবারিক ভাবে যুগ যুগ ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন।