জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে নাটমন্দিরে আনা হল সোনার তৈরি দুর্গা মূর্তি
বর্তমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস জলপাইগুড়ি
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দেবীপক্ষে জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে নাটমন্দিরে এল সোনার দুর্গা। নাটমন্দির ঘুরে ওই মূর্তি গেল পাশেই বৈকুণ্ঠনাথের মন্দিরে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে প্রথমে সেখানে সম্পন্ন হল সোনার দুর্গার চক্ষুদানপর্ব। এরপর নাটমন্দিরে চক্ষুদান হল রাজবাড়ির মৃন্ময়ী প্রতিমার। তর্পণ সেরে মন্দিরে বসে মায়ের চক্ষুদান চাক্ষুষ করলেন রাজবাড়ির প্রবীণ সদস্য প্রণতকুমার বসু, তাঁর পুত্রবধূ লিন্ডা বসু। উপস্থিত ছিলেন রাজপরিবারের কুলপুরোহিত শিবু ঘোষাল। শিল্পীর তুলির টানে চোখ মেলে তাকালেন রাজবাড়ির দুর্গা। রবিবার দুপুরে প্রতিমার চক্ষুদান দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষজন।
রাজবাড়ি জুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। আজ, প্রতিপদ থেকে শুরু ঘটপুজো। চক্ষুদানের পরই রাজবাড়ির মৃন্ময়ী প্রতিমাকে বসন পরানো হয়। প্রথা মেনে রাজ পরিবারের তরফে মা দুর্গাকে শাড়ি দেওয়া হয়েছে। ওই বসনের উপর পরানো হবে বেনারসী। লক্ষ্মী, সরস্বতী ও মা দুর্গার শাড়ি এসেছে কলকাতা থেকে। অসম থেকে এসেছে কার্তিক, গণেশের পোশাক। রাজবাড়ির দেবী তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা। এখনও চালু আছে গুপ্তপুজো। এখানে মা দুর্গার বাহন হিসেবে উপস্থিত বাঘ ও সিংহ। সঙ্গে থাকে দুর্গার দুই সখী জয়া ও বিজয়া। পুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে। দেবীর ভোগে থাকে জলপাইগুড়ির করলা নদীর বোয়াল, সঙ্গে মহাশোল, চিতল, ইলিশ, চিংড়ি, পুঁটি। দশমীতে খই, দই নিবেদন করার পর পান্তাভাত, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুশাক, পুঁটিমাছ ভাজা ও শাপলার খোল দেওয়া হয় ভোগে। দেবীর বিসর্জন হয় রাজবাড়ির পুকুরেই।
জনশ্রুতি, নরবলি দিয়ে শুরু হয়েছিল জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির পুজো! খেলার ছলে মাটির দলা দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে মা দুর্গা রূপে প্রথম পুজো করেছিলেন দুই ভাই বিশ্ব (বিশু) সিংহ ও শিষ্য (শিশু) সিংহ। সেই পুজোতে নাকি ছাগশিশু কল্পনা করে বলি দেওয়া হয়েছিল এক বালককে! বলির রক্তে ভেসে গিয়েছিল চারপাশ। বলা হয়, দেবী দুর্গার আশীর্বাদে পরবর্তীতে বিশ্ব সিংহ কোচবিহারের রাজা হন। আর শিষ্য সিংহ হন বৈকুণ্ঠপুরের রাজা। রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরও দুর্গাপুজো বন্ধ করেননি তাঁরা। ৫০০ বছর পেরিয়ে আজ রাজা কিংবা রাজ্যপাঠ না থাকলেও ধুমধামের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় পুজো। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির পুজোয় এখনও বলির রেওয়াজ রয়েছে। বলি দেওয়া হয় হাঁস, পায়রা, পাঁঠা, চালকুমড়ো ও আখ। সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে বলি দেওয়া হয় চারটি পাঁঠা। অষ্টমীর মাঝরাতে চার জোড়া পায়রা বলির সময় মন্দির চত্বরে থাকতে দেওয়া হয় না বাইরের লোকজনকে। মন্দিরের চারদিক ঘিরে শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্য আর পুরোহিতের উপস্থিতিতে ওই বলি হয়। এবার ৫১৬ বছরে পা দিল এই পুজো। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির সোনার দুর্গার চক্ষুদান। - নিজস্ব চিত্র।